প্রতিদিনের মতো সেদিনও এজলাসে উঠলাম বিচার কাজ পরিচালনার জন্য। সাক্ষীর জন্য একটি মামলার ডাক পড়লো। মামলাটি মসজিদ সংক্রান্ত। মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি ১৩ জনকে আসামি করে একটি ফৌজদারি মামলা করেছেন। আমি বাদীকে জিজ্ঞাসা করলাম মসজিদটি কি বর্তমানে চালু আছে? বাদী বললো মাননীয় আদালত মসজিদ বন্ধ আছে। এবার আসামিদের জিজ্ঞাসা করলাম তারা বললো মাননীয় আদালত মসজিদ চালমান আছে। দুই পক্ষের দুই বক্তব্য শুনে সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না। মামলার কার্যক্রম একদিনের জন্য স্থগিত রেখে পরের দিন সকল সাক্ষীর জন্য তারিখ নির্ধারণ করলাম।
এজলাস থেকে নেমে গোমস্তাপুর থানার ওসি তদন্তকে ফোন করে মসজিদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের নির্দেশ দিলাম। ওসি তদন্ত আন্তরিকতার সহিত আমার নির্দেশনা অনুসারে মসজিদের সমস্ত তথ্য প্রেরণ করলেন। জানালেন ২০০৪ সনে মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত হয় কিন্তু দীর্ঘ আট মাস ধরে মসজিদটি বন্ধ আছে। মামলার কারণে গ্রামবাসীদের মধ্যে দুইটি পক্ষে বিভক্ত হওয়ার জন্য এই ঘটনা ঘটেছে। পরের দিনে যথারীতি মামলা শুনানির জন্য আমার সামনে পেশ করা হলো।
সাক্ষী সমাপ্ত অন্তে মামলার উভয় পক্ষের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলার সুযোগ হলো। আমার বক্তব্য, আমার অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপে মামলার উভয়পক্ষকে একত্রিত করতে সক্ষম হলাম। তাদেরকে নির্দেশনা দিলাম শুক্রবার জুম্মার নামাজ শেষে মুসল্লিদের জন্য খাবারের আয়োজন করবেন। তাদের আন্তরিকতা দেখে আমিও লোভ সামলাতে পারলাম না। তাদের সেই আয়োজনে কন্ট্রিবিউট করার চেষ্টায় বাদীর হাতে ৫০০০/- (পাঁচ হাজার) টাকা দিলাম।
আজই সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। জুম্মার নামাজ হলো বাদী আসামী একসঙ্গে বসে খাবার খেলো এবং একটি মামলার যবনিকা ঘটলো। বিচারের বিস্তৃতি শুধু আদালত চত্বরে না মানুষের অন্তরে ঘটুক, প্রতিষ্ঠিত হোক ন্যায়বিচার।
লেখক: হুমায়ুন কবির,সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট