যুক্তরাষ্ট্রকে টপকে মধ্যপ্রাচ্যের অন্দর মহলে চীন!

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের শুরু থেকেই নতুন সুর উঠেছে বিশ্ব শাসনে, যুক্তরাষ্ট্রের একাধিপত্য আর টিকবে না। বহুমেরুর বিশ্ব হবে। পশ্চিমা শাসনের বিরুদ্ধে মাতা তুলে দাঁড়াবে চীন-রাশিয়া বলয়। শুক্রবার চীনের ‘অলৌকিক’ মধ্যস্থতায় মধ্যপ্রাচ্যের দুই পরাশক্তি ইরান-সৌদি আরবের পুনর্মিলনে বিশ্বরাজনীতির সেই মেঘই যেন বৃষ্টি হয়ে ঝরল।

যুক্তরাষ্ট্রের চক্ষুশূল ইরান ও পশ্চিমা ‘দুলাল’ সৌদি আরব এদিন তাদের মধ্যকার সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সম্মত হয়। দুদেশের বৈরিতার কারণে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা হুমকির মধ্যে পড়েছিল। ইয়েমেন থেকে সিরিয়া পর্যন্ত সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে।

আরব দেশগুলো ইরান-সৌদি এ সমঝোতাকে স্বাগত জানিয়েছে। একে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যের অবসানের ইঙ্গিত বলে মনে করছেন একজন বিশেষজ্ঞ। রয়টার্স, আল-আরাবিয়া, আলজাজিরা।

চীনের মধ্যস্থতায় বেইজিংয়ে মধ্যপ্রাচ্যে দু’শক্তিধর প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ইরান ও সৌদি আরবের শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মধ্যে চার দিনব্যাপী আলোচনার পর এ কূটনৈতিক সাফল্য অর্জিত হয়।

তেহরান ও রিয়াদের মধ্যে ব্যাপকভিত্তিক সমঝোতা হয়। তারা পরস্পরের রাজধানীতে সাত বছর পর দূতাবাস খুলতে সম্মত হয়। এ ছাড়া পরস্পরের সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও একে অপরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার ব্যাপারে সম্মত হয়।

২০১৬ সালে একজন শিয়া আলেমকে সৌদিতে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এ ঘটনায় তেহরানে সৌদি আরবের দূতাবাসে হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর দুদেশ পরস্পরের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। ২০১৯ সালে সৌদি তেল স্থাপনায় ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার রিয়াদ তেহরানকে দোষারোপ করে। ইরান এ অভিযোগ অস্বীকার করে।

ইরান সমর্থিত ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরাও সীমান্তের ওপারে সৌদি ভূখণ্ডে হামলা চালায়। সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট ইয়েমেনে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। এ ঘটনায় ২০২২ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে হামলার ঘটনা ঘটে। ভূ-রাজনীতির বিশ্লেষক হিসাবে পরিচিত অধ্যাপক অশোক সইন বলেছেন,

‘ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক পুনরুজ্জীবনে মধ্যপ্রাচ্যে রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যের আনুষ্ঠানিক অবসান ঘটতে যাচ্ছে। জেরুজালেমে ইসরাইলের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, ইরানের সাথে সৌদি আরবের সমঝোতা দেশটির সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা ব্যাহত হবে না।’

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এ সমঝোতাকে সংলাপ ও শান্তির জন্য একটি বিজয় বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, বেইজিং কঠিন আন্তর্জাতিক সংকট নিরসনে গঠনমূলক ভূমিকা পালন অব্যাহত রাখবে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন কিরবি বলেন, সৌদি আরব এ আলোচনা সম্পর্কে তাদের অবহিত করেছে। তবে তারা এর সাথে সরাসরি জড়িত নয়।

জো বাইডেনের মানবাধিকার ও ইয়েমেন যুদ্ধ সম্পর্কিত নীতি, রাশিয়া ও ওপেক সম্পর্ক এবং ওপেকের তেল উৎপাদন নিয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্কে তিক্ততার সৃষ্টি হয়। সৌদি-চীন সম্পর্ক উন্নয়ন ঘটে। তিন মাস আগে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সৌদি আরব সফর করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *