বাবার মতোই বিলাসী জীবনযাপন কিমকন্যার

উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উনের বিলাসী জীবন সম্পর্কে কে না জানে। এ ব্যাপারে একেবারেই সিদ্ধহস্ত তিনি। অন্য সব বাদ রেখে শুধু তার সিগারেটের খরচের বাহার দেখলেই চোখ কপালে ওঠার মতো অবস্থা।

কিম জং উনের আয়েশি জীবন নিয়ে ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড মিররের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফরাসি কোম্পানি দ্য ইয়েটস সেইন্টের বানানো এক একটি সিগারেট কিনতে তিনি ব্যয় করেন ৪৪ ডলার। এছাড়াও প্রাইভেট জেট, দামি মদ, প্রাসাদসম বাড়ি এবং মিলিয়ন ডলারের ঘড়িসহ কিসে নেই বিলাসিতার ছাপ!

এবার বাবার পথেই হাঁটছে তার মেজো কন্যা জু-আই। মাত্র ১০ বছর বয়সি এই মেয়ের বিলাসী জীপনযাপনের চিত্র দেখলে মাথা ঘুরে যাওয়ার উপক্রম। খবর টেলিগ্রাফের। ‘রাজা’র মেয়ে বলে কথা! সাধারণ-মধ্যবিত্ত-অভিজাত দেশের সব শ্রেণির ছেলেমেয়েদের থেকেই আরও এক ধাপ উপরে তুলে নিয়েছে নিজেকে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গণ্ডি না মাড়িয়ে পুরো শিক্ষাঙ্গনকেই তুলে এনেছেন নিজের ‘রাজপ্রাসাদে’। বিপুল খরচে রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ের বাসভবনেই চলছে তার পড়াশোনা। এছাড়াও অবসর সময়ে ঘোড়ায় চড়া, স্কিং এবং সাঁতার কাটার মতো ‘রাজকীয়’ শখ পূরণে ব্যস্ত দেখা যায় তাকে। শুনতে সাধারণ মনে হলেও এরই মধ্যে রয়েছে উচ্চাভিলাষী ছাপ।

কারণ বেশ কয়েক বছর ধরেই দেশটিতে চলা খাদ্য সংকট আরও তীব্র হচ্ছে। তবে তা নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য নেই প্রশাসনের। দেশ রসাতলে গেলেও ঠিকই রাজার হালেই থাকেন কিম জং উন ও তার পরিবার। ওদিকে নুন আনতে পান্তা ফুরাচ্ছে প্রজাদের (জনগণের)। অবাক হওয়ার বিষয় হলো শত অভাবেও ভয়ে মুখ খোলে না জনগণ।

কোভিড-১৯ মহামারি এবং ভুল কৃষিনীতির ফলে কিমের ১১ বছরের শাসনামলে উত্তর কোরিয়ার খাদ্য পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ সময়ের মধ্যে রয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তারা আসন্ন দুর্ভিক্ষ বা গণমৃত্যুর কোনো লক্ষণ দেখতে পাচ্ছেন না।

চলতি সপ্তাহে দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উত্তর কোরিয়ার কিছু বিশেষজ্ঞ জানান, একটি ছোট্ট মেয়ের জীবনে এই বিলাসিতা আভাস দেয় যে, কিম শেষ পর্যন্ত তার উত্তরসূরি হিসাবে জু-আইয়ের হাতেই শাসনভার ছেড়ে দেওয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে আগ্রহী হতে পারেন।

যদিও দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার বিশ্বাস করে না যে, জু-আই উত্তরাধিকারী হিসাবে অভিষিক্ত হতে পারে। দেশটির ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসেস (এনআইএস) জানিয়েছে, কিমের তিনটি মেয়ে রয়েছে যাদের বয়স ১৩, ১০ এবং ৬ বছর।

একজন রাজনীতিবিদ ইউ সাং-বাম চলতি সপ্তাহে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, তারা মনে করছেন কিম জং উন এখনো তার উত্তরাধিকারী বাছাইয়ের জন্য খুবই কম বয়সি। তবে ঠিক কেন মেয়েকে সামনে আনছেন কিম তা নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা। কেউ কেউ বলছেন, নারীর ক্ষমতায়নে জোর দিচ্ছেন তিনি।

গত বছরই (১৮ নভেম্বর) বাবার সঙ্গে হঠাৎ জনজীবনের বিভিন্ন পরিসরে আসতে শুরু করে জু। দেশটির একাধিক অফিশিয়াল ইভেন্টেও তার রাজকীয় উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। ফেব্রুয়ারিতে একটি বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজের সময় একটি আনুষ্ঠানিক অশ্বারোহী ইউনিটে উন্মোচন করা হয়েছিল।

যেখানে জু আই তার সাদা ঘোড়াটি নিয়ে এসেছিল। শাসক কিম রাজবংশের পৌরাণিক কাহিনিতে সাদা ঘোড়ার প্রতীক দীর্ঘদিন ধরেই প্রচলিত। কিম জং-উনকেও প্রায়ই ঘোড়ায় চড়ে তার ব্যক্তিগত শক্তি এবং সর্বোচ্চ নেতা হিসাবে তার ক্ষমতাকে প্রদর্শন করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *