পুঁজি ২০৯ রানের। উইকেট যেমনই হোক, ওয়ানডে ম্যাচে এমন পুঁজি নিয়ে জেতার স্বপ্ন দেখা বাড়াবাড়িই। তবে বাংলাদেশের বোলাররা সাধ্যের সবটুকু নিংড়ে দিলেন। জয়ের ভালো সম্ভাবনাই তৈরি করেছিলেন তারা। কিন্তু সেই সম্ভাবনা আর স্বপ্ন ধূলিস্যাৎ করে দিলেন ডেভিড মালান। ইংল্যান্ডের বাঁহাতি এই টপঅর্ডার বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে হাঁকালেন লড়াকু এক সেঞ্চুরি। বলতে গেলে এক মালানের কাছেই হেরে গেলো বাংলাদেশ।
২১০ রান তাড়া করতে নেমে ১০৩ রানেই ৫ উইকেট হারিয়েছিল ইংলিশরা। এরপর মঈন আলিকে নিয়ে অনেকটা সময় কাটিয়ে দেন ডেভিড মালান। ম্যাচটা ক্রমেই ইংল্যান্ডের দিকে ঝুঁকে পড়ছিল। এমন সময় আবার আশা জাগান মিরাজ। ১৪ করা মঈনকে করেন বোল্ড।
এরপর ক্রিস ওকস ৭ করে হন তাইজুলের শিকার। ১৬১ রানে ৭ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। পাল্লা তখন আবার ঝুঁকে পড়েছে বাংলাদেশের দিক। কিন্তু মালান মাথা ঠাণ্ডা রেখে সে জায়গা থেকে বের করে নিয়ে এলেন ম্যাচ। মিরপুরে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেটি ৩ উইকেট আর ৮ বল হাতে রেখে জিতেছে ইংল্যান্ড। তিন ম্যাচ সিরিজে তারা নিয়েছে ১-০ লিড। মালান ১৪৫ বলে ৮ চার আর ৪ ছক্কায় অপরাজিত থাকেন ১১৪ রানে।
অথচ ৬৫ রানে ইংল্যান্ডের ৪ উইকেট তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশ। পঞ্চম উইকেটে ডেভিড মালান আর উইল জ্যাকস প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ৫৭ বল খেলে গড়া তাদের ৩৮ রানের জুটিটি অবশেষে ভাঙেন মেহেদি হাসান মিরাজ। টাইগার অফস্পিনারের বলে তুলে মারতে গিয়ে ডিপমিডউইকেটে আফিফ হোসেনের ক্যাচ হন জ্যাকস। ৩১ বলে তিনি করেন ২৬ রান।
অল্প পুঁজি নিয়ে শুরুটা কিন্তু দারুণ হয়েছিল বাংলাদেশের। প্রথম ওভারেই সাকিব আল হাসানের হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। আর বল হাতে নিয়েই ইংলিশ শিবিরে কাঁপন ধরান সাকিব। ওভারের প্রথম বলটিতেই পেতে পারতেন উইকেট। সাকিবকে ফিরতি ক্যাচ দিয়েছিলেন জেসন রয়। তবে সেই ক্যাচটি সাকিব ধরে রাখতে পারেননি।
শেষ বলে আরও একবার ভুল করে বসেন রয়। এবার সাকিবকে তুলে মারতে গিয়ে মিডঅফে ক্যাচ তুলে দেন ইংলিশ ওপেনার। তামিম ইকবাল ধরেন সেই ক্যাচ। এসে সাকিবের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মাতেন উদযাপনে। রয় আউট হন ৪ রানে। ৪ রানেই প্রথম উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। সাকিব প্রথম ওভারে আঘাত হানার পর অনেকটা সময় উইকেট টিকিয়ে রেখেছিল ইংল্যান্ড। অবশেষে নবম ওভারে এসে বাংলাদেশ শিবিরে হাসি ফেরান তাইজুল ইসলাম।
তাইজুলের ঘূর্ণি ডেলিভারি মিস করে লেগস্টাম্প হারান ফিল সল্ট। বোল্ড হওয়া ইংলিশ ওপেনার ১৯ বলে করেন ১২ রান। তাইজুল অল্প সময়ের ব্যবধানে তুলে নেন তার দ্বিতীয় উইকেট। বাঁহাতি স্পিনারের ঘূর্ণি বুঝতে না পেরে এবার স্টাম্পিং হন জেমস ভিন্স (৬)। ১৩তম ওভারে ৪৫ রানে ইংল্যান্ড হারায় ৩ উইকেট।
দুই স্পিনারের পর উইকেট শিকারের উৎসবে যোগ দেন পেসার তাসকিন আহমেদও। তুলে নেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইংলিশ অধিনায়কের উইকেটটি।
তাসকিন আহমেদের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে ব্যাট চালিয়ে উইকেট বিলিয়ে দেন জস বাটলার (৯)। প্রথম স্লিপে দারুণ এক ক্যাচ নেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ১৭তম ওভারে ৬৫ রানে ৪ উইকেট হারায় সফরকারীরা। এর আগে ব্যাটিং ব্যর্থতায় ৪৭.২ ওভারে ২০৯ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। নাজমুল হোসেন শান্ত করেন ৫৮ রান, মাহমুদউল্লাহ ৩১ আর তামিম ইকবাল ২৩ রান। বাকিরা কেউ বিশের ঘরও ছুঁতে পারেননি।
লিটন দাস ৭, মুশফিকুর রহিম ১৬, সাকিব ৮, আফিফ হোসেন ধ্রুব ৯ আর মেহেদি হাসান মিরাজ আউট হন মাত্র ৭ রান করে। শেষদিকে তাসকিন আহমেদের ১৪ আর তাইজুল ইসলামের ১০ রানে কোনোমতে দুইশ পার হয় টাইগাররা। ইংল্যান্ডের পক্ষে দুটি করে উইকেট নেন জোফরা আর্চার, মার্ক উড, মঈন আলি আর আদিল রশিদ।