দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড চুয়াডাঙ্গায়

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি : দেশের সর্বনিম্ন ৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। আজ বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) সকালে জেলার আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রকিবুল হাসান এ তথ্য জানান। এদিকে, জেলার ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। হাড় কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত চুয়াডাঙ্গার মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বিশেষ করে ছিন্নমূল ও অসহায় মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। শীত নিবারণের চেষ্টায় আগুন জ্বালিয়ে উত্তাপ নিতে দেখা গেছে নিম্নআয়ের মানুষকে।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রকিবুল হাসান বলেন, আজ সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৯৭ শতাংশ। মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত আছে। তাপমাত্রা হ্রাস পাওয়ায় শীতের তীব্রতা খুব বেশি অনুভূত হচ্ছে। এরকম পরিস্থিতি অব্যাহত থাকবে। তাপমাত্রা আরও কমতে পারে।

শহরের বড় বাজার এলাকায় কাজের সন্ধানে থাকা এক দিনমজুর বলেন, কনকনে শীত পড়েছে। এর সঙ্গে বাতাস শীতের তীব্রতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তারপরও থেমে নেই কাজ। বাধ্য হয়েই কর্মস্থলে যেতে হচ্ছে। শীতে কাজ না পেয়ে বাড়িতে ফিরতে হচ্ছে অনেকেরই। তপু আলী নামে এক হোটেল কর্মচারী বলেন, প্রতিদিন সকালে নাশতার জন্য হোটেলে প্রচুর চাপ থাকে।

এজন্য ফজরের আজানের পর থেকেই কাজ করতে হয়। ভোরে পানিতে হাত দিলে মনে হয় অবশ হয়ে যাচ্ছে। আঙুলগুলো নাড়ানো যাচ্ছে না। তারপরও পেটের দায়ে কাজ করছি। বেসরকারি চাকরিজীবী লিয়াকত মিয়া বলেন, সকাল ৮টার মধ্যে অফিসের উদ্দেশ্যে বের হতে হয়। প্রচণ্ড শীতের কারণে পায়ে হেঁটে যাচ্ছি অফিসে। এতে শরীরটা একটু গরম থাকে। কিন্তু হিমেল হাওয়ায় জবুথবু অবস্থা।

জেলা শহরের রিকশাচালক মাসুম বলেন, আজ প্রচণ্ড শীত লাগছে। ঠান্ডার জন্য রিকশা চালানো যাচ্ছে না। হাত-পায়ের পাতা মনে হচ্ছে বরফ হয়ে যাচ্ছে। পেটের দায়ে বাড়ি থেকে বের হলেও প্যাসেঞ্জার পাওয়া যাচ্ছে না। জামশেদ আলী নামে এক কৃষক বলেন, আজ ভোরে কাজে যেতে পারিনি শুধু অতিরিক্ত শীতের কারণে। এভাবে ঠান্ডা পড়লে কাজে যাওয়া সম্ভব হবে না। ফসলের ঠিকমতো পরিচর্যা করা সম্ভব হচ্ছে না।

চা-দোকানি গাফফার বলেন, ভোর থেকেই প্রচণ্ড শীত। আজও দোকানে খরিদ্দার নেই। এদিকে, শীতজনিত কারণে হাসপাতালগুলোতে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে ১৩টি বেডের বিপরীতে ভর্তি রয়েছে প্রায় শতাধিক। অপরদিকে, প্রতিদিন ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি হচ্ছে শতাধিক।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মাহবুবুর রহমান মিলন বলেন, তীব্র শীতে শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়াসহ শীতজনিত বিভিন্ন রোগে হাসপাতালের আউটডোরে প্রচুর রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। এছাড়া প্রতিদিন তিন থেকে চারশ শিশু আউটডোরে চিকিৎসা নিয়েছে। শীতজনিত কারণে নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আতাউর রহমান বলেন, তীব্র শীতে রোটাভাইরাসের কারণে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বেশিরভাগই শিশু রোগী। শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়াসহ শীতজনিত বিভিন্ন রোগে হাসপাতালের আউটডোরে তিন থেকে চার শতাধিক বয়োবৃদ্ধরা চিকিৎসা নিচ্ছেন।

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান বলেন, আমাদের শীতবস্ত্র ও কম্বল বিতরণ অব্যাহত আছে। এছাড়া আমি চুয়াডাঙ্গা বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও বিত্তবান মানুষদের শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করেছি। আর আমি নিজেও ব্যক্তিগত ও সরকারিভাবে ছিন্নমূল ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *