পরিবেশদূষণের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় একটি দেশ। শুধু বায়ুদূষণের কারণে এখানে প্রতিবছর প্রায় লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। আর এই বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ হচ্ছে হাজার হাজার ইটভাটা। বেশির ভাগ ইটভাটাই অবৈধ। এগুলোতে প্রচলিত আইন, নিয়ম-কানুন প্রায় কিছুই মানা হয় না। নিষিদ্ধ ড্রাম চিমনি ব্যবহার করা হয়। কয়লার পরিবর্তে কাঠ পোড়ানো হয়। ফসলি জমিতে ভাটা করা হয়। জমির টপ সয়েল বা ওপরের উর্বর অংশ কেটে নেওয়া হয়। পাহাড়-টিলা কেটে সমান করে দেওয়া হয়।
এত অনিয়মের পরও অজ্ঞাত কারণে এসব ইটভাটার ব্যাপারে প্রশাসন প্রায় নির্বিকার থাকে। মাঝেমধ্যে লোক-দেখানো কিছু অভিযান চালানো হয়। দু-একটি অবৈধ ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় বা জরিমানা করা হয়। কয়েক দিন পরই সেসব ইটভাটার কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়। ইটভাটার মালিকরা দাবি করেন, প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করেই তাঁরা ইটভাটা পরিচালনা করছেন। প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে অবৈধ ইটভাটা এবং ইটভাটার অবৈধ কর্মকাণ্ড নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়। আইনে আছে, বনের তিন কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা থাকতে পারবে না।
অথচ বাস্তবে দেখা যায়, বনের গা ঘেঁষেই তৈরি হয়েছে অনেক ইটভাটা। একইভাবে আইন লঙ্ঘন করে জনবসতি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে কিংবা ফসলি জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে অনেক ইটভাটা। অনেক ভাটারই পরিবেশ অধিদপ্তর, বন বিভাগের ছাড়পত্র, ইট পোড়ানোর অনুমতিপত্র, ফায়ার সার্ভিসের সনদপত্র, এমনকি ভ্যাট-আয়কর প্রদানেরও কোনো কাগজপত্র নেই। এর পরও বছরের পর বছর ইটভাটাগুলো চলে আসছে কিভাবে?
তাহলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো সেখানে কী ভূমিকা পালন করছে? নির্মাণসামগ্রী হিসেবে ইটের অনেক বিকল্প রয়েছে। কিন্তু আমরা সেদিকে কমই যাচ্ছি। ইট পোড়ানোর অনেক উন্নত পদ্ধতিও এসেছে। ইট পোড়াতে বাংলাদেশেও অনেক দিন থেকেই গ্যাসের ব্যবহার হচ্ছে। প্রয়োজনে গ্যাসের ব্যবহার আরো বাড়াতে হবে। কিন্তু কোনোক্রমেই এভাবে বনাঞ্চল বা বৃক্ষসম্পদ ধ্বংস করা যাবে না। জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি সৃষ্টি করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের অবহেলা বা উদাসীনতার কোনো সুযোগ নেই। ইটভাটাসংক্রান্ত আইন-কানুনের যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে।