নওগাঁয় বাড়ছে শীতের তীব্রতা। দিন যত যাবে শীতের তীব্রতা ততই বাড়বে। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীত থাকবে। শীত আসার সঙ্গে সঙ্গেই ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়া শিশু ও বয়স্কদের ভিড়। শিশু ওয়ার্ডে বেডের সংখ্যা কম হওয়ায় চিকিৎসা নিতে হচ্ছে মেঝেতে। ওষুধ সরবরাহ কম থাকায় বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হচ্ছে রোগীর স্বজনদের।
নওগাঁ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, শনি থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত (৬ দিন) শিশু ও বয়স্কসহ ইনডোরে প্রায় ৩০০ শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। এরমধ্যে শিশু ২২০ জন ও বয়স্ক প্রায় ৮০ জন। হাসপাতালে ১১ বেডের বিপরীতে শিশু ওয়ার্ডে প্রতিদিন চিকিৎসা নিচ্ছে গড়ে ২৫-৩০ জন। এছাড়া আউটডোরে গত ছয়দিনে প্রায় এক হাজার ১০০ জন শিশুকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। জেলা সিভিল সার্জন অফিসের তথ্যমতে, জেলার ১০টি উপজেলায় গত এক সপ্তাহে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছে ৪৭১ জন।
শহরের কোমাইগাড়ি মহল্লার গৃহবধূ মরিয়ম বেগম বলেন, হঠাৎ করে নাতনী বমি করা শুরু করে। ৪-৫ বার বমি হওয়ায় ভয়ে হাসপাতালে নিয়ে আসছি। শিশু ওয়ার্ডে যে কয়েকটি বেড আছে সবগুলোতে রোগী ভর্তি। বাধ্য হয়ে মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। হাসপাতাল থেকে কিছু ওষুধ পাওয়া গেছে। আর কিছু ওষুধ বাইরের দোকান থেকে কিনতে হয়েছে।
সদর উপজেলার চক-চাপাই গ্রামের গৃহবধূ মুনমুন বলেন, ছেলে আব্রাহামের বয়স দেড় বছর। হঠাৎ করেই ছেলে সকাল থেকে দুই বার বমি করেছে। এরপর দুপুর থেকে পাতলা পায়খানা। রাত পার করে সকালে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। স্যালাইন দেওয়া পরও কয়েকবার পায়খানা ও বমি হয়। এখন আল্লাহর রহমতে কিছুটা কমেছে।
হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে সিনিয়র স্টাফ নার্স সেমিনা সুলতানা বলেন, প্রয়োজনের তুলনায় নার্সের সংখ্যা কম। এছাড়া ওয়ার্ডে বেডের সংখ্যা ১১টি। এর চেয়ে প্রতিদিন ৩-৪গুন বেশি শিশু চিকিৎসা নেয়। শিশু ওয়ার্ডে রোগীর চাপ বেশি হওয়ায় এবং জনবল কম থাকায় হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে শীত যত বাড়বে রোগীর সংখ্যাও তত বাড়বে।
জুনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু) ডা. মো. উজ্জল হোসেন বলেন, শীতের কারণে শিশু ও বয়স্করা ডায়রিয়াসহ ও শ্বাসকষ্ট জনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বাহিরের কোনো খাবার না খাওয়া ও সকালে ঘর থেকে বের না হওয়াসহ গরম কাপড় ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া বাসা-বাড়িতে তৈরি করা খাবারের পাশাপাশি খাওয়ার স্যালাইন খেতে হবে।
নওগাঁ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক (উপ-পরিচালক) ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী বলেন, নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত শীতের মৌসুম। এতে বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা নানা রোগে আক্রান্ত হয়। এর প্রভাব পড়ে হাসপাতালগুলোতে। তবে চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধমুলক হিসেবে গ্রহণ করা উত্তম। এসময় শিশু ও বয়স্কদের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।
তবে ওষুধ সরবরাহের বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক বলেন, এরই মধ্যে সরকারি সরবরাহ করা ওষুধ পাওয়া গেছে। তবে এমএসআর (মেডিকেল সার্জিক্যাল রিকুইজিট) টেন্ডার হলে আমরা ওষুধ কিনতে পারবো। কিছু ওষুধ সংকট আছে। আশা করছি শিগগিরই সমাধান হয়ে যাবে।