লাতিন আমেরিকার বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ব্রাজিল। দেশটিতে বিলিয়নিয়ার বা শত কোটি ডলারের মালিক, এমন লোকের অভাব নেই। মার্কিন সাময়িকী ফোর্বসের হিসাবে ব্রাজিলে বর্তমানে অর্ধশতাধিক বিলিয়নিয়ার রয়েছেন। তাদের কেউ বিয়ার ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত, কেউ ব্যাংকের মালিক, কেউ ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা। কৃষিপণ্য, গরুর মাংস, জুতার ব্যবসা করেও বিলিয়নিয়ার হওয়ার নজির রয়েছে দেশটিতে। তবে কোনো ফুটবলার এই তালিকায় নেই।
চলুন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক ব্রাজিলের শীর্ষ ১০ ধনী কারা-
ব্রাজিলে শীর্ষ ধনীদের তালিকায় প্রথম তিনজনই বিয়ার ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। আরও স্পষ্ট করে বললে, বিশ্বের বৃহত্তম বিয়ার উৎপাদক অ্যানহিউজার-বুশ ইনবেভ বা এবি ইনবেভের অংশীদার তারা। ব্রাজিলের সর্বোচ্চ ধনীর নাম জর্জ পাওলো লেম্যান। ফোর্বস বিলিয়নিয়ার ইনডেক্স অনুসারে, এই মুহূর্তে জর্জের সম্পদের পরিমাণ ১ হাজার ৫১০ কোটি মার্কিন ডলার। দ্বিতীয় স্থানে থাকা মার্সেল হারম্যান টেলসের সম্পদের পরিমাণ ১ হাজার ৩০ কোটি ডলার। আর তৃতীয় কার্লোস আলবার্তো সিকুপিরা ও তার পরিবারের সম্পদ রয়েছে ৮৫০ কোটি ডলারের।
বা থেকে কার্লোস আলবার্তো সিকুপিরা, জর্জ পাউলো লেম্যান ও মার্সেল টেলেস। ছবি সংগৃহীত
বিশ্বখ্যাত ফাস্টফুড ব্র্যান্ড বার্গার কিংয়ের মূল কোম্পানি রেস্টুরেন্টস ব্র্যান্ডস ইন্টারন্যাশনাল এবং কানাডীয় কফিশপ চেইন টিম হর্টনেও শেয়ার রয়েছে ব্রাজিলের এই শীর্ষ তিন ধনীর। বর্তমানে বিশ্বের সর্বোচ্চ ধনীদের তালিকায় জর্জ ১০৬তম, মার্সেল ১৬৯তম এবং কার্লোস রয়েছেন ২২০তম অবস্থানে।
জোসেফ সাফরার সঙ্গে স্ত্রী ভিকি সাফরা। ছবি সংগৃহীত
ব্রাজিলে চতুর্থ সর্বোচ্চ ধনী পরিবার হলো সাফরা ভাইদের। ২০২০ সালে ব্রাজিলিয়ান ব্যাংকিং টাইকুন জোসেফ সাফরার মৃত্যুর পর তার বিশাল সম্পত্তি চার পুত্র ও স্ত্রীর মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। এই মুহূর্তে সাফরা ভাইদের সমন্বিত সম্পদের পরিমাণ ৭২০ কোটি ডলার। সুইস ব্যাংক জে. সাফরা সারাজিন, সাফরা ন্যাশনাল ব্যাংক অব নিউইয়র্ক, ব্যাঙ্কো সাফরাসহ বিশাল রিয়েল এস্টেট ব্যবসার মালিক ছিলেন তাদের বাবা জোসেফ।
এডুয়ার্ডো সাভারিন। ছবি সংগৃহীত
পঞ্চম স্থানে রয়েছেন বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এডুয়ার্ডো সাভারিন। ২০০৪ সালে হার্ভার্ডের সহপাঠী মার্ক জুকারবার্গের সঙ্গে ফেসবুক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি। এখনো ফেসবুকের বর্তমান মূল কোম্পানি মেটাতে কিছু শেয়ার রয়েছে সাভারিনের। তা থেকেই বেশিরভাগ আয় আসে তার। ফোর্বসের হিসাবে, ৬৬০ কোটি ডলারের মালিক সাভারিন ব্রাজিলে পঞ্চম ও বিশ্বের মধ্যে ৩৫৮তম ধনী ব্যক্তি।
লুসিয়া ম্যাগি। ছবি সংগৃহীত
ব্রাজিলের ষষ্ঠ ধনী পরিবার লুসিয়া ম্যাগির। ১৯৭৭ সালে তিনি স্বামি আন্দ্রে ম্যাগির সঙ্গে আন্দ্রে ম্যাগি গ্রুপ বা আমাগি প্রতিষ্ঠাতা করেন। এটি ব্রাজিলের বৃহত্তম সয়াবিন উৎপাদক, রয়েছে অন্য পণ্যের ব্যবসাও। আন্দ্রে ২০০১ সালে মারা যাওয়ার পর ব্যবসার হাল ধরেন লুসিয়া। মূলত ২০১৫ সালের পর থেকে রকেটগতিতে বাড়তে থাকে তার সম্পদ। গত সাত বছরে প্রায় ছয়গুণ বেড়ে লুসিয়ার মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৯০ কোটি ডলার।
এরপর রয়েছেন আলেক্সান্দ্রে বেহরিং। ব্রাজিলিয়ান-আমেরিকান বিনিয়োগ কোম্পানি ৩জি ক্যাপিটালের সহ-প্রতিষ্ঠাতা তিনি। রেস্টুরেন্টস ব্র্যান্ডস ইন্টারন্যাশনাল ও বহুজাতিক কোম্পানি ক্র্যাফট হেইনজে শেয়ার রয়েছে ৩জি ক্যাপিটালের। ২০২০ সালে প্রথমবারের মতো ফোর্বসের বিলিয়নিয়ার তালিকায় জায়গা করে নেন বেহরিং। তার বর্তমান সম্পদের পরিমাণ ৫৫০ কোটি ডলার।
ব্রাজিলে শীর্ষ ধনীদের তালিকায় অষ্টম স্থানে রয়েছেন আন্দ্রে এস্টিভস। ব্রাজিলিয়ান বিনিয়োগ ব্যাংক প্যাকচুয়ালে ইন্টার্ন হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন তিনি। ঘটনাক্রমে পুরো ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেন আন্দ্রে। ২০০৬ সালে এটিকে সুইস ব্যাংকিং জায়ান্ট ইউবিএসের কাছে ৩১০ কোটি ডলারে বিক্রি করে দেন এবং সহযোগী কোম্পানি হিসেবে ইউবিএস প্যাকচুয়াল চালু করেন। এটিও ২০০৯ সালে বিনিয়োগ ফার্ম বিটিজির কাছে বিক্রি করে দেন এবং নতুন গঠন করা কোম্পানির চেয়ারম্যান হন। আন্দ্রের বর্তমান সম্পদের পরিমাণ ৫৩০ কোটি ডলার।
লাতিন আমেরিকার দেশটিতে নবম শীর্ষ ধনী জর্জ মোল ফিলহো ও তার পরিবার। ফিলহো মূলত একজন কার্ডিওলজিস্ট। ব্রাজিলের বৃহত্তম হাসপাতাল ও ল্যাব পরিচালক রেডে ডি’অরের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। এই কোম্পানির অধীনে ৩০টির বেশি হাসপাতাল রয়েছে। ২০২০ সালের পর রীতিমতো আঙুল ফুলে কলা গাছ হন ফিলহো। তার সম্পদ ২০০ কোটি থেকে একলাফে ১ হাজার ১৩০ কোটি ডলারে পৌঁছায়। তবে এরপরই ঘটে বড় পতন। বর্তমানে ৪৬০ কোটি ডলারের মালিক ফিলহো পরিবার।
ব্রাজিলের ১০ম ধনী লুসিয়ানো হাং। তার সাফল্য এসেছে ডিপার্টমেন্টাল স্টোর চেইন হাভানের হাত ধরে। অনলাইনের চেয়ে সশরীরে কেনাবেচায় বিশ্বাসী লুসিয়ানো। ১৯৮৬ সালে হাভান প্রতিষ্ঠান করেন তিনি। আজ ব্রাজিলের ছোট ও মধ্যম শহরগুলোতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ১৫৫টি দোকান রয়েছে হাভানের, কর্মী রয়েছে প্রায় ২০ হাজার। মোটমাট ৪৬০ কোটি ডলারের মালিক লুসিয়ানো হাং ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট ডানপন্থি নেতা জেইর বলসোনারোর কট্টর সমর্থক বলে পরিচিত।