ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পূর্তি ও সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সংগঠনটির যুব মহাসমাবেশ ঘিরে মানুষের ঢল নেমেছে। ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ও দেশের প্রায় সব জেলা-উপজেলা থেকে আসা নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে উদ্যানের দিকে যাচ্ছেন।
দুপুর ১টা নাগাদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও এর আশপাশের এলাকা ‘জয় বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে স্লোগানে মুখর হয়ে উঠেছে। নেতাকর্মীদের মাঝে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। শুক্রবার (১১ নভেম্বর) দুপুর আড়াইটায় শুরু হতে যাওয়া যুব মহাসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মহাসমাবেশে ১০ লাখেরও বেশি লোকের সমাগম হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের শীর্ষ নেতারা। যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ জানিয়েছেন, মহাসমাবেশ থেকে দেশবাসীর উদ্দেশে বিশেষ বার্তা দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
সমাবেশ ঘিরে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে এবং সার্বিক পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ ও সুশৃঙ্খল রাখতে ব্যাপক সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। উদ্যানে প্রবেশের সব গেটে পুলিশ অবস্থান নিয়েছে।
এরমধ্যে শুধু ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের পাশের গেট দিয়ে নিরাপত্তাকর্মী ও সমাবেশ বাস্তবায়নে দায়িত্বরত টিম প্রবেশ করছে। উদ্যানের বিভিন্ন গেট ও ভেতরে টহল দিচ্ছেন গোয়েন্দা সংস্থা, আনসার, পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর সদস্যরা।
যুবলীগের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সকাল থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের রমনা কালী মন্দির গেইট, টিএসসি, দোয়েল চত্বর গেট এলাকা ঘুরে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি দেখা গেছে। কাতারে কাতারে মানুষ সারিবদ্ধভাবে উদ্যানে প্রবেশ করছেন।
যুবলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা রাজধানীতে ছোট ছোট মিছিল বের করেছেন। দেশের প্রায় সব জেলা-উপজেলা থেকে বিভিন্ন যানবাহনে ঢাকায় ঢুকছেন নেতাকর্মীরা। অনেকে আগের দিন রাতেই ঢাকায় চলে এসেছেন।
এদিন বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শাহবাগ, মৎস্য ভবন, দোয়েল চত্বর এলাকা ঘিরে নেতাকর্মীদের ঢল নামে। অনেকে রিজার্ভ বাস, পিকআপভ্যান, মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে এসেছেন। পায়ে হেঁটেও মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন নেতাকর্মীরা।
এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করেছেন, যুবলীগের সুবর্ণজয়ন্তীর মধ্য দিয়ে যুব সমাজের সংগ্রামী চেতনার ধারা আরও শাণিত ও বেগবান হবে। মহাসমাবেশে আসা নেতাকর্মীরা বিভিন্ন রঙের টি-শার্ট, ক্যাপ পরেছেন। তাদের হাতে রয়েছে বাহারি ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড।
খণ্ড খণ্ড মিছিল আর ‘জয় বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানের সঙ্গে ভুভুজেলাসহ বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে উৎসবের আমেজে মানুষ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে আসছেন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মহাসমাবেশস্থলে প্রবেশের জন্য পাঁচটি গেট রাখা হয়েছে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রবেশ পথগুলোতে লাইনে দাঁড়িয়ে উদ্যানে প্রবেশ করতে দেখা যায় নেতাকর্মীদের। পুলিশ এসময় তল্লাশি করে প্রবেশ করাচ্ছে মহাসমাবেশে আসা এসব মানুষদের। যুব মহাসমাবেশে আজ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান জনসমুদ্রে পরিণত হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন যুবলীগ নেতারা।
গত বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ আশা প্রকাশ করে বলেছিলেন, যুব মহাসমাবেশে ১০ লাখ মানুষের সমাগম হবে।
তিনি জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুব মহাসমাবেশে সকলের উদ্দেশ্যে বিশেষ বার্তা দেবেন। সেই বার্তা শোনার জন্যই মানুষের ঢল নামবে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। এটি হবে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় যুব মহাসমাবেশ।
যুবলীগের দপ্তর সূত্র জানিয়েছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সর্বসাধারণের প্রবেশ দুদিন আগ থেকেই বন্ধ করা হয়েছে। যুব সমাবেশ সফল করতে মোট ১০টি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর দেশের প্রথম ও সর্ববৃহৎ এ যুব সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক প্রথিতযশা সাংবাদিক শেখ ফজলুল হক মনি এ সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও শোষণমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে যুব সমাজকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। গত প্রায় পাঁচ দশক ধরে দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম ও হাজারো নেতাকর্মীর আত্মত্যাগের মাধ্যমে যুবলীগ আজ দেশের সর্ববৃহৎ যুব সংগঠনে পরিণত হয়েছে।