সায়ের আলম পাভেল (৩৪) পেশায় একজন রংমিস্ত্রী। তবে পরিচয় দিতেন বিবিএ, এমবিএ ডিগ্রীধারী, আবার কখনো ম্যাজিস্ট্রেটের ছেলে। এই পরিচয়ে রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় এক তরুণীকে প্রেমের প্রস্তাব দেন পাভেল। প্রেমে ব্যর্থ হয়ে ও তরুণীর বাবা-মায়ের কাছে অপমানিত হন। এ কারণে প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করেন পাভেল।
এক পর্যায়ে নিজের কথিত ছোট ভাই লন্ডনের বড় ব্যবসায়ীর সঙ্গে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অপহরণ করে নিয়ে যান ওই তরুণীর ছোট বোনকে (১৪)। অপহরণের পর মুক্তিপণ চাইলে ভিকটিম কিশোরীর বাবা বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে রাতে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর এলাকা থেকে ভিকটিম কিশোরীকে উদ্ধারসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
গ্রেফতাররা হলেন- মো. সায়ের আলম পাভেল (৩৪), মো. শেখ আলমগীর (২৩) ও মো. জাহাঙ্গীর আলম (৩৫)। পুলিশ জানায়, ওই কিশোরীকে অপহরণ করে টাঙ্গাইলে জাহাঙ্গীরের বাসায় রাখা হয়। তিনি আরও দুই মামলার আসামি। এ থেকে পুলিশ ধারণা করছে গ্রেফতাররা নারী পাচারকারী চক্রের সদস্য। তবে পরবর্তী তদন্তে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।
শুক্রবার (১৯ আগস্ট) নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক। তিনি বলেন, গত ১৪ আগস্ট নবম শ্রেণি পড়ুয়া ওই কিশোরীকে প্রলোভন দেখিয়ে বাসা থেকে অপহরণ করা হয়। এরপর জাহাঙ্গীর ভিকটিমের বাবার কাছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন, অন্যথায় মেয়েটিকে যৌনপল্লীতে বিক্রি করার হুমকি দেন।
বিষয়টি পুলিশকে জানালে মেয়েকে গুম করারও হুমকি দেওয়া হয়।এক পর্যায়ে ১৮ আগস্ট মেয়েটির বাবা পুলিশকে জানালে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। এরপর তাৎক্ষণিকভাবে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় অবস্থান শনাক্ত করে মির্জাপুর থেকে ভিকটিমকে উদ্ধারসহ দুজনকে ও পরে একজনকে গ্রেফতার করা হয়।
ছোট ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে কিশোরীকে অপহরণ করা হয় জানিয়ে ডিসি এইচ এম আজিমুল হক বলেন, আলমগীর তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ডে রং মিস্ত্রির কাজ করে। রং মিস্ত্রির কাজের সুবাদে আলমগীরের সঙ্গে পাভেলের পরিচয় হয়।
আলমগীরের মাধ্যমে পরিচয় সূত্রে ওই এলাকার এক তরুণীকে প্রেমের প্রস্তাব দেয় পাভেল। তরুণীর বাবা-মায়ের কাছেও বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যায় সে। কিন্তু পাভেল প্রেমে সাড়া না পেয়ে প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করেন। ওই তরুণীর বিয়ে হয়ে গেলে পাভেল তার ছোট বোনের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখেন।
এক পর্যায়ে নিজের কথিত লন্ডন প্রবাসী ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে স্কুলপড়ুয়া ওই কিশোরীকে বাসা থেকে অপহরণ করে নিয়ে যান পাভেল। এরপর তাকে ঢাকা থেকে নিয়ে টাঙ্গাইলে জাহাঙ্গীরের বাসায় রাখে। জাহাঙ্গীর ভিকটিমের বাবাকে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করেন।
উদ্ধার কিশোরীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, পাভেল এমনভাবে তাকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিল যে, তার ভাইকে বিয়ে করার আশায় ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। আমরা মেয়েটিকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ওই ভাইকে দেখেছে কি না। সে বলেছে কখনো দেখেনি, শুধু ছবি দেখেছে। পাভেলের এই ভাইয়ের কথা বলা প্রতারণারই অংশ হতে পারে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, প্রায় দুই বছর ধরে ভিকটিম ও তার বোনের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল পাভেলের। ভিকটিমের বাড়ির সামনে গিয়েও দেখা করে কথা বলতো সে। ভিকটিমের ব্যক্তিগত জীবন ও পারিবারিক বিষয়ও পরবর্তী তদন্তে জানা যাবে।