পদত্যাগ করলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস। ক্ষমতাগ্রহণের মাত্র ৪৪ দিন যেতে না যেতেই সরে দাঁড়ালেন তিনি। বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) ডাউনিং স্ট্রিট থেকে দেওয়া ভাষণে ট্রাস বলেছেন, তিনি কনজারভেটিভ পার্টির নেতার পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তের বিষয়ে ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসকে জানিয়েছেন।
এদিন সাংবাদিকদের সামনে নিজের পদত্যাগের কারণ সম্পর্কে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন, তা বাস্তবায়ন করতে না পারায় সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ট্রাস বলেন, এই দেশ দীর্ঘদিন ধরে নিম্ন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে পিছিয়ে ছিল এবং তিনি তার দলের সাহায্যে এটি পরিবর্তন করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
একটি বিশাল অর্থনৈতিক ও আন্তর্জাতিক অস্থিতিশীলতার মুহূর্তে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছিলেন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘কম ট্যাক্স উচ্চ প্রবৃদ্ধির অর্থনীতি’র জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল তার সরকার। ট্রাস বলেন, আমি স্বীকার করছি… যে প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে কনজারভেটিভ পার্টি থেকে নির্বাচিত হয়েছিলাম, তা দিতে পারবো না।
পদত্যাগকারী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনি ১৯২২ কমিটি চেয়ারম্যান স্যার গ্রাহাম ব্র্যাডলির সঙ্গে আজ দেখা করেছেন। আগামী সপ্তাহের মধ্যে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের বিষয়ে সম্মত হয়েছেন তারা। ট্রাস জানিয়েছেন, উত্তরসূরী নির্বাচিত হওয়ার আগপর্যন্ত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন তিনি।
ট্রাস প্রশাসনের আসল সমস্যার শুরু গত ২৩ সেপ্টেম্বর। সেদিন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী কোয়াসি কোয়ার্টেং বিশাল ট্যাক্স ছাড় দিয়ে মিনি-বাজেট ঘোষণার পরপরই যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক বাজারে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। বাজেট ঘোষণার তিনদিন পরে মার্কিন ডলারের বিপরীতে ব্রিটিশ পাউন্ডের দর নেমে যায় ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে।
ফলে ট্রাস-কোয়ার্টেংয়ের আর্থিক নীতি নিয়ে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির মধ্যেই মতবিরোধ দেখা দেয়। বিতর্কের মুখে গত ৩ অক্টোবর রেকর্ড ট্যাক্স ছাড়ের সিদ্ধান্ত থেকে কিছুটা পিছু হটেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু তাতেও সমালোচনা থামেনি। শেষপর্যন্ত গত ১৪ অক্টোবর পদত্যাগ করেন কোয়ার্টেং। তার স্থলাভিষিক্ত হন আরেক কনজারভেটিভ নেতা জেরেমি হান্ট। দায়িত্ব পেয়েই তিনি কোয়ার্টেং, তথা লিজ ট্রাসের বেশিরভাগ পরিকল্পনা বাতিল করে দেন।
এছাড়া হাউজ অব কমনসে ফ্র্যাকিং প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়ে গতরাতের ভোটাভুটিতেও ব্যাপক নাটকীয়তা সৃষ্টি হয়। এই বিতর্কের মধ্যেই পদত্যাগ করেন ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রাভারম্যান। এর ফলে প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসের ওপর চাপ আরও বেড়ে যায় এবং শেষপর্যন্ত তিনিও সরকারপ্রধানের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন।