ভোলার বোরহানউদ্দিনে চোখ ওঠা রোগের প্রকোপ বাড়ছে। প্রায় প্রতিটি ঘরেই কেউ না কেউ এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। চিকিৎসকরা বলছেন, গরমে আর বর্ষায় চোখ ওঠার প্রকোপ বাড়ে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটিকে কনজাংটিভাইটিস বা কনজাংটিভার বলা হয়। তবে স্থানীয়ভাবে এ সমস্যাটি চোখ ওঠা নামেই পরিচিত। রোগটি ছোঁয়াচে। ফলে দ্রুত অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। বোরহানউদ্দিন উপজেলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের উপসহকারী মেডিক্যাল অফিসার আবুল কালাম জানান, ১৫ সেপ্টেম্বর জরুরি বিভাগে আসা ৪৫ জন রোগীর মধ্যে ১৫ জনই চোখ ওঠা রোগী ছিলেন।
হাসাপাতালে সামনে সেবা মেডিক্যাল হলের মালিক আকবর হোসেন মানিক বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে চোখ ওঠার ২ জন রোগী এসে চোখের ড্রপ কেনেন।’ স্থানীয় চক্ষু চিকিৎসক চেম্বারের একজন কর্মকর্তা শিমুল বলেন, ‘বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ৩০ জন রোগী আসেন। তাদের মধ্যে ১৪ জনই ছিলেন চোখ ওঠার রোগী।’ বোরহানউদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী মোবাশ্বেরা জান্নাত তুবা ও ১ম শ্রেণির ছাত্র তায়েব বলেন, ‘চোখে কাটা কাটা বাজে। চুলকায়। আলোর দিকে তাকাতে পারি না। ঘুম থেকে উঠে দেখি দু’চোখ আটকিয়ে গেছে।’
বোরহানউদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুননাহার বেগম বলেন, ‘আক্রান্তদের আমরা ছুটির ব্যবস্থা করে দেই।’ বোরহানউদ্দিন উদ্দিন আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা আব্দুল হান্নান বলেন, ‘প্রথমে আমার স্ত্রী আক্রান্ত হয়। এরপর আমার বাবা- মা, দুই সন্তান, এরপর আমিও আক্রান্ত হই।’ ওষুধের ফার্মেসি কামাল মেডিক্যাল হল, সৈয়দ মেডিক্যাল হল এবং আরজু মেডিক্যাল হল মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েকদিনে চোখের ড্রপের চাহিদা বেড়েছে।
এতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়েই চোখের ড্রপ ও অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধ সেবন করছেন। এসব ওষুধ সেবন করে অনেকেই দুই তিন দিনের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন। আবার কেউ ৫-৭ দিন। তবে চোখ ওঠা রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা রোগটি ছোঁয়াচে জেনেও তারা তাদের প্রাত্যহিক কাজ করে যাচ্ছেন। মেলামেশা করছেন সবার সঙ্গেই।’ ট্রিটমেন্টের কথা জিজ্ঞাসা করাতে তিনি বলেন, ‘ফার্মেসি থেকে একটা চোখের ড্রপ নিয়েছিলাম। পরিবারের অন্য সদস্যদের কথা চিন্তা করে বাসায় কালো চশমা ব্যবহার করেছি। এর আগে পরিবারের কয়েকজনের এ সমস্যা হয়েছে।
৪/৫ দিনের মধ্যে সেড়েও উঠেছেন তারা।’ বোরহানউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মশিউর রহমান সাদী বলেন, ‘চোখ ওঠা ছোঁয়াচে রোগ। পরিবারের একজনের থেকে অন্যজনের হতে পারে। সুতরাং এসব ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধের জন্য পরিবারের সবাই কাপড়, তোয়ালে ও অন্যান্য জিনিস আলাদা ব্যবহার করতে হবে। আক্রান্তদের উদ্বিগ্ন না হয়ে চক্ষু চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। পাশাপাশি বাসায় আইসোলেশনে থাকতে হবে।’