আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু বলেছেন, দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে যুক্ত না হলে নয় মাসে দেশ স্বাধীন হতো না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীতে অনেকেই আজ বিরোধী পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এটা বেঈমানির সামিল। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে ১৫ আগস্টের কুশীলবদের প্রতিহত করতে হবে।
শনিবার রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সেমিনার হলে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড: অভ্যন্তরীণ ষড়ষন্ত্র ও মার্কিন যোগসাজশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় আমির হোসেন আমু এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার সুবিধাভোগী কারা, তা আজ সুস্পষ্ট। সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রসহ চার মূলনীতি সংযোজনের কারণে তাকে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সুবিধাভোগী কারা ছিল? যারা ষড়যন্ত্র করেছে? জিয়া, মোশতাক, জাতীয় পার্টির কাজ সেটা পরিষ্কার করে দেয়। সেই ষড়যন্ত্র এখনও আছে। কেননা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে ১৯ বার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনের সময় রাষ্ট্রধর্ম বাদ দেয়ার ক্ষেত্রে নিজেদের মধ্যেই বিরোধিতার মুখে পড়ার কথা জানিয়ে আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান এই নেতা বলেন, সংবিধানের ১৫তম সংশোধনীর সময় রাষ্ট্রধর্ম বাতিল করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ২-১ জন সদস্য ভেটো দেয়ায় তা করা সম্ভব হয়নি। এখানে উল্লেখ্য যে, ওয়ার্কার্স পাির্টর সংসদ সদস্যরা রাষ্ট্রধর্ম বাতিল বিলে সমর্থন না করে ভোট দানে বিরত ছিলেন।
ঢাকাস্থ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ওই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি। কোভিডে আক্রান্ত হওয়ায় ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ মেনন অনুষ্ঠানে ছিলেন না। তার পক্ষে সূচনাপত্র পড়ে শোনান দলের নেতা কামরুল আহসান। ওই পত্রে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের ষড়যন্ত্র প্রকাশ করতে ‘জাতীয় তদন্ত কমিশন’ গঠন করার দাবি করা হয়। আওয়ামী লীগ নেতা আমু এ প্রসঙ্গে বলেন, একটা তদন্ত কমিশন এখন সময়ের দাবি। দুই বছর আগেও আমরা বলেছি। একটা বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি হোক বা গণ কমিশন হোক, সেটা গঠন করে তদন্ত করে নেপথ্যের নায়কদের খুঁজে বের করা হোক।
ওয়ার্কার্স পার্টির আলোচনা সভায় একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবীর বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার মূল নায়ক জিয়াউর রহমান। বঙ্গবন্ধু হত্যার মাধ্যমে পাকিস্তানের ধারায় দেশকে নেয়া হয়েছিল। যে কারণে সংবিধান সংশোধন করে জিয়া বিসমিল্লাহ্ বসাল মাথার ওপরে। বঙ্গবন্ধু ধর্মীয় রাজনীতি বন্ধ করেছিলেন। জিয়া সেটা আবার পুনরুদ্ধার করে। এখনও সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রয়েছে। তার মানে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি রয়ে গেছে।
জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ছিল নিছক কোনো ব্যক্তির হত্যা নয়। বাংলাদেশকে দ্বিতীয় পাকিস্তান বানানোর ষড়যন্ত্র। সেই কাজ জেনারেল জিয়াউর রহমান পরিকল্পিতভাবে করেছেন। এরশাদ করেছেন। সংবিধানে এখনও সাম্প্রদায়িকতা-সামরিক সরকারের ক্ষত আছে। এগুলো ধীরে ধীরে দূর করতে হবে।