সময়মতো পাশ না হলে ব্যালটেই ভোট: ইসি রাশেদা

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনার প্রকল্প পাশ হওয়ার ক্ষেত্রে খুব একটা এগোচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা। তিনি জানান, ১৫ জানুয়ারির মধ্যে এ প্রকল্প পাশ না হলে ১৫০ আসনে ভোটগ্রহণ করা যাবে না। সেক্ষেত্রে ইসির হাতে যে সংখ্যক ইভিএম রয়েছে সেগুলো ব্যবহারের পর বাকিগুলোতে কাগজের ব্যালটে ভোটের প্রস্তুতি নিতে হবে। রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

এদিন নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে এক বৈঠকে জাতীয় পরিচয়পত্র ইসির হাতে থাকবে না স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যাবে তা নিয়ে মিশ্র মতামত দিয়েছেন প্রযুক্তিবিদেরা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহারের লক্ষ্যে ৮৭১১ কোটি ৪৪ লাখ টাকার নতুন একটি প্রকল্পের প্রস্তাব সরকারকে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ওই প্রকল্প এখনো পাশ হয়নি।

ইসি রাশেদা সুলতানা বলেন, প্রকল্প পাশের বিষয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের (মন্ত্রণালয়/সরকার) সঙ্গে কথা হয়নি। এটার রীতিও নেই। ইসি সচিবালয় হয়তো কথা বলবে। আমাদের সক্ষমতা যা আছে, তাই দিয়ে ভোট করব। আমাদের সক্ষমতা তো জানামতে ৭০ থেকে ৮০টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করার মতো আছে। এখন কত মেশিন সচল আছে জানি না। এর আগে জাতীয় পরিচয়পত্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেওয়া হলে ইভিএমে ভোটগ্রহণে সমস্যা হবে কি না সে বিষয়ে চারজন কারিগরি বিশেষজ্ঞের মতামত নেয় কমিশন।

তারা হলেন শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ, অধ্যাপক হায়দার আলী, ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম। নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত ওই সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল ও চার নির্বাচন কমিশনার উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকের বিষয়ে বেগম রাশেদা সুলতানা বলেন, প্রযুক্তিবিদদের মধ্যে কেউ কেউ ইসির অধীনেই এনআইডি থাকার পক্ষে। কেউ কেউ থাকার পক্ষে না। আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। টেকনিক্যাল বিষয়গুলো জানার জন্য তাদের সঙ্গে বসেছিলাম। এখন আমরা নিজেরা বসব, তারপর সিদ্ধান্ত নেব।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, উনারা (চারজন প্রযুক্তিবিদ) স্পষ্টভাবে যেটা বলেছেন, জাতীয় পরিচয়পত্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গেলেও ইভিএমে ভোট নিতে টেকনিক্যালি কোনো সমস্যা হবে না। কারণ হলো, ভোটারদের সার্ভার তো আমাদের কাছেই থাকছে। এটা কোনো সমস্যা না। তিনি বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেওয়ার বিষয়ে প্রযুক্তিবিদদের কাছ থেকে মিশ্র বক্তব্য এসেছে। কেউ কেউ বলেছেন, জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। আপনারা কেন বাড়তি দায়িত্ব নিতে যাবেন।

ইসির কাজ হলো ভোটার তালিকা করা, সুষ্ঠু নির্বাচন করা। যেহেতু এটা সরকারেরই কাজ, তাই সরকার চাইলে নিতে পারে। আবার কেউ কেউ বলেছেন, তবে যেহেতু ইসি জাতীয় পরিচয়পত্র দক্ষতার সঙ্গে করে আসছে, তাই কমিশনের কাছেই রাখা যায়। তাই সরকারকে যদি কনভিন্স করা যায় যে, জাতীয় পরিচয়পত্র ইসির হাতে থাকলেই ভালো হয়। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বলেও জানান তিনি।

এদিকে বৈঠক শেষে শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্রের ডাটাবেজ যেখানেই থাকুক সব একেবারে আইডেন্টিক্যাল হতে হবে। যদি আইডেন্টিক্যাল না থাকে এটা হাস্যকর হয়ে যাবে। অধ্যাপক হায়দার বলেন, সরকারই টাকা দিয়ে এনআইডি তৈরি করেছে। তবে কোনো কোনো দেশে কমিশনের কাছে ডাটাবেজ আছে। আবার কোনো কোনো দেশে সরকারের কাছে আছে। আমরা কোনোটাই জোর দিইনি কার কাছে থাকা উচিত। ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম বলেন, যেখানেই এটা ইউনিক থাকুক। ইউনিক থাকলে যেখানেই থাকুক এটা নিয়ে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

টেকনিক্যাল ফিচারগুলো যদি সঠিক থাকে, ঠিকভাবে ম্যানেজ হয় যার কাছেই থাকুক কোনো সমস্যা নেই। সন্দেহের কিছু হবে না। অধ্যাপক কায়কোবাদ বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র দিতে কমিশনের অভিজ্ঞতা হয়েছে। ইসির অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো উচিত। অন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠানেই যাক না কেন তাদের তো এই অভিজ্ঞতা নেই। কাজেই এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো উচিত এবং ব্যয় সাশ্রয়ী হওয়া উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *