বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই এমন একটি অঘটন ঘটবে কে জানতো? কে ভেবেছিল ভারত, পাকিস্তানের মত দলকে হারিয়ে এশিয়া কাপের শিরোপা জেতা শ্রীলঙ্কা বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে এসে এভাবে মুখ থুবড়ে পড়বে? নামিবিয়ার মত দলকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়ে হয়তো হালকাভাবেই নিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। আর নামিবিয়া খেলেছিল, কিছু না হারানোর চিন্তা নিয়েই। ভয়ডরহীন ক্রিকেট উপহার দিয়ে এবারের বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই শ্রীলঙ্কাকে ৫৫ রানে হারিয়ে রীতিমত বিশাল এক অঘটনের জন্ম দিলো নামিবিয়া। গিলংয়ের কার্দিনিয়া পার্কে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৬৩ রান সংগ্রহ করেছিল নামিবিয়া। জবাব দিতে নেমে শ্রীলঙ্কা ১৯ ওভারে অলআউট হয়ে যায় ১০৮ রানে।
ম্যাচে যে চিত্র অঙ্কিত হয়েছে, তাতে নামিবিয়াকে মনে হয়েছে শ্রীলঙ্কা এবং শ্রীলঙ্কাকে মনে হয়েছে নামিবিয়া। ১৬৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামার পর নামিবিয়ান বোলারদের সামনে স্রেফ হাঁটু কাঁপতে দেখা গেছে এশিয়া কাপজয়ী লঙ্কানদের। কি ব্যাটিং, কি বোলিং আর কি ফিল্ডিং- যেন ‘চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা’র মতো হয়ে উঠেছিল নামিবিয়া। অন্যদিকে নামিবিয়ার বোলারদের কী দুর্দান্ত লাইন এবং লেন্থ! লঙ্কান ব্যাটারদের একটি ভালো জুটি গড়ে তোলার সুযোগ দেয়নি তারা। বিপজ্জনক হয়ে ওঠা দাসুন শানাকা কিংবা ভানুকা রাজাপাকসেকে খুব বেশি এগুতে দেয়নি।
শানাকা ২৩ বলে ২৯ রান করে এবং রাজাপাকসে ২১ বলে ২০ রান করে আউট হন। ব্যাট হাতে নামিবিয়ার শুরুটা হয়েছিল একটু স্লো; কিন্তু শেষ দিকে এসে গতি বাড়িয়ে শ্রীলঙ্কার সামনে ১৬৪ রানের বিশাল চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয় তারা। শক্তির তুলনায় লঙ্কানদের চেয়ে অনেক পিছিয়ে থাকা দলটি যখন এমন একটি স্কোর গড়ে ফেলে, তখন স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচটিতে উত্তেজনা ছড়াবে, সন্দেহ ছিল না।
কিন্তু রান তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই শ্রীলঙ্কা পুরোপুরি ব্যাকফুটে। নামিবিয়ান বোলিংয়ের সামনে বলতে গেলে দিশেহারা অবস্থা হয় লঙ্কান ব্যাটারদের। টসের সময়েই নামিবিয়ার অধিনায়ক গেরহার্ড এরাসমাস বলেছিলেন, ‘এই কন্ডিশনে ভালো করার মত বোলার আমাদের হাতে রয়েছে।’ তারই প্রতিধ্বনি যেন বোলিংয়ে এসে দিয়ে যাচ্ছিল নামিবিয়ান বোলাররা। শুরুতে ২১ রানে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে লঙ্কানদের পুরোপুরি চেপে ধরে নামিবিয়া। এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে লঙ্কানরা। সে সঙ্গে রানের চাকা সচল করতে না পারায় বাড়তে থাকে চাপ। যা শেষ পর্যন্ত পরাজয়ের দিকে নিয়ে যায় তাদের।
অভিজ্ঞ ডেভিড ওয়াইজই মূলতঃ পার্থক্যটা গড়ে দেন। শুরুতেই ব্রেক থ্রু আনেন তিনি। কুশল মেন্ডিসকে জেন গ্রিনের ক্যাচে পরিণত করেন তিনি। ৬ বলে ৬ রান করে ফিরে যান মেন্ডিস। এরপর পরপর দুই বলে দুই উইকেট তুলে নিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলেন তরুণ পেসার বেন শিকোঙ্গো। প্রথমে পাথুম নিশাঙ্কাকে জেজে স্মিটের হাতে ক্যাচ দেয়ান শিকোঙ্গো। ১০ বলে ৯ রান করে আউট হন তিনি। দানুসকা গুনাথিলাকা ব্যাটের কানায় লাগিয়ে ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে। যদিও পরের বলে আর হ্যাটট্রিকটা করতে পারেননি শিকোঙ্গো।
ধনঞ্জয়া ডি সিলভা চেষ্টা করেন ঘুরে দাঁড়ানোর। কিন্তু ১২ রান করার পর তাকেও সাজঘরের পথ দেখিয়ে দেন ইয়ান ফ্রাইলিংক। শিকোঙ্গোর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তিনি। ভানুকা রাজাপাকসে এবং অধিনায়ক দাসুন শানাকা মিলে চেষ্টা করেন পঞ্চম উইকেট জুটিতে ঘুরে দাঁড়ানোর। কিন্তু তাদের ৩৪ রানের জুটিটাকে আর বাড়তে দেননি স্কলটজ। রাজাপকসেকে লা কুকের হাতে ক্যাচে পরিণত করে এই জুটি ভাঙ্গেন তিনি। ২১ বলে ২০ রান করে ফেরেন রাজাপাকসে। সঙ্গী হারিয়ে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি দাসুন শানাকা। ২৩ বলে তিনি করেন ২৯ রান। ২টি বাউন্ডারি এবং ১টি ছক্কার মার মারেন তিনি।
পরের ব্যাটাররা আর দাঁড়াতেই পারেননি। হাসারাঙ্গা ৪, চামিকা করুনারত্নে ৫, প্রমোদ মধুশান শূন্য, দুষ্মন্তে চামিরা আউট হন ৮ রান করে। ১১ রানে অপরাজিত থাকেন ১১ নম্বর ব্যাটার মহেশ থিকসানা। নামিবিয়ার বোলারদের মধ্যে ২টি করে উইকেট নেন ডেভিড ওয়াইজ, ব্রেন্ডন স্কলটজ, বেন শিকোঙ্গো, ইয়ান ফ্রাইলিংক, জেজে স্মিট। এর আগে চস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৭ উইকেটে ১৬৩ রান সংগ্রহ করেছিল নামিবিয়া।