রাবি শিক্ষার্থী শাহরিয়ারের মৃত্যু নিয়ে ধূম্রজাল

রাবি প্রতিনিধি : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শহীদ হবিবুর রহমান হলের তৃতীয় তলা থেকে পড়ে বুধবার (১৯ অক্টোবর) রাতে মো. গোলাম মোস্তাকিম শাহরিয়ার নামে এক শিক্ষার্থী মারা গেছেন। তবে এটা দুর্ঘটনা, আত্মহত্যা নাকি পরিকল্পিত হত্যা তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধূম্রজাল। দেখা দিয়েছে নতুন নতুন প্রশ্নের। শাহরিয়ারের খুব কাছের বন্ধু মেহেদি হাসানের দাবি, এটা কোনো আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনা না।

এটা ষড়যন্ত্র। মেহেদি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘মৃত্যু মানুষের হাতে নেই। কিন্তু সেটার কারণ জানাটা অতি জরুরি। একজন মেধাবী শিক্ষার্থী হঠাৎই আশ্চর্যজনকভাবে ছাদ থেকে পড়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক মৃত্যুর কাতারে পড়ে না। তার সুষ্ঠু তদন্ত করার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’ শাহরিয়ারের আরেক বন্ধু মিজানুর রহমান আবার ধারণা করেছেন, এটি দুর্ঘটনা। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘শাহরিয়ার আমার খুব ভালো বন্ধু ছিল।

একসঙ্গে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যারিয়ার ক্লাবে দীর্ঘ সময় কাজ করেছি। সে আসলে আত্মহত্যা করার মতো ছেলে নয়। তবে সে মাঝেমাঝে হলে বারান্দা থেকে ছাদের দিকে পার হতো। আবার রেলিংয়ে বসে থাকত। সেদিক থেকে এটি দুর্ঘটনা হতে পারে।’ শাহরিয়ারকে উদ্ধার করা ব্যক্তিদের একজন রাশেদুল ইসলাম। তিনি হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, ‘কোনো কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দ শুনে দ্রুত রুম থেকে বের হয়ে দেখি, টিউবওয়েলের শানের ওপর একজন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। তখন তার জ্ঞান ছিল না।

সেখানে তার প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছিল। পরে আরও কয়েকজনসহ গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই।’ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নির্মাণশ্রমিক নূর নবী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমি নামাজ পড়তে হলে যাওয়ার সময় ওপর থেকে টি-শার্টের মতো কিছু একটা পড়তে দেখি। সেখানে গিয়ে দেখি একজন পড়ে আছে রক্তাক্ত অবস্থায়। আমি চিৎকার করলে হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা সবাই ছুটে আসে।’

তিনি বলেন, ছেলেটি মুখ থুবড়ে পড়েনি। ছেলেটির মাথায় আঘাত লেগেছে, কিন্তু সেটা পেছন দিক থেকে এক পাশে। আরও অদ্ভূত বিষয় হচ্ছে, এত উঁচু থেকে পড়ার পরও ছেলেটির মাথা ফাটেনি। আরেক প্রত্যক্ষদর্শী হলের আবাসিক শিক্ষার্থী এম হাসান হিমেল বলেন, শাহরিয়ার যখন কলের শানের উপরে পড়েছিল, তখন জোরে শব্দ হয়েছিল। পাশেই আমার রুম ছিল। জানালা দিয়ে দেখেছি পা উপুড় ছিল, প্রথমে মাথাটাই নিচে লাগতে দেখি। চার তলায় কিছু ছেলে ছিল, তারা পড়ে গেছে বলে চিৎকার করতেছিল। তার কাছে কোনো মোবাইল ছিল না, ঘটনাস্থলেও পাওয়া যায়নি।

হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই দিন রাত ৮টার দিকে হলের তৃতীয় ব্লকে কিছু একটা পড়ে যাওয়ার শব্দ শোনা যায়। শব্দ শুনে কয়েকজন এসে দেখেন, হল মসজিদের সামনে শান বাঁধানো টিউবওয়েলের পাড়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন শাহরিয়ার। তখন কয়েকজন মিলে দ্রুত তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, যেহেতু তার পাশে কেউ ছিল না তই সে কীভাবে পড়ে গিয়েছে এটা জানা যায়নি। আমাদের কাছে এমন কোনো আলামত আসেনি যা দেখে আমরা বলব যে এটা পরিকল্পিত হত্যা। তবে তার আত্মীয়স্বজন বা সহপাঠীরা যদি তদন্তের জন্য দাবি জানায়, তাহলে আমরা অবশ্যই এটা নিয়ে তদন্ত করব।

প্রসঙ্গত, বুধবার (১৯ অক্টোবর) রাত ৮টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শহীদ হবিবুর রহমান হলের তৃতীয় তলা থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে ৮ নং ওয়ার্ডে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *