জিল্লুর রহমান জয় : বাংলার প্রকৃতিতে আজ অভিষেক ঘটেছে ঋতুরাজ বসন্তের। তাই তো আগুন লেগেছে ফাগুনে। ফুলেল বসন্ত, মধুময় বসন্ত, যৌবনের উদ্দামতা বয়ে আনার বসন্ত আর আনন্দ, উচ্ছ্বাস ও উদ্বেলতায় মন-প্রাণ কেড়ে নেওয়ার আজ প্রথম দিন। করোনার কারণে গেল দুই বছর রঙিন বসন্ত ছিল অনেকটায় অমলিন। তাই সেই বাসন্তী উৎসবকে পূর্ণতা দিতে এবার শহর জুড়েই আয়োজন করা হয়েছে নানান অনুষ্ঠান। মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) পয়লা ফাল্গুন; তাই সকালেই রাজশাহী কলেজ থেকে শহরে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি মহানগরীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টেসহ বিভিন্ন প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে প্রতিষ্ঠানে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে আলোচনা সভা, গান, নৃত্যসহ দিনভর নানান আয়োজন রয়েছে।
এদিকে, বরাবরের মত বসন্তের মূল আকর্ষণ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস; বিশেষত চারুকলায়। শুকনো পাতার মড় মড় ধ্বনি ভেঙে শিক্ষার্থীরা আড্ডা-গানে দিন পার করছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রাণের উচ্ছ্বাসে চলছে বসন্ত বরণ উৎসব। শোভাযাত্রা, কবিতা আর গানে নেচে-গেয়ে বরণ করে নেওয়া হচ্ছে ঋতুরাজ বসন্তকে। দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রাণবন্ত করে তুলেছে রাবি শিক্ষার্থীদের।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা যোগ দিয়েছেন সেই অনুষ্ঠানে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে উদযাপন করা হচ্ছে এ বসন্ত বরণ উৎসব। এছাড়া বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সাধারণ মানুষ নিজ-নিজ আয়োজনে মেতেছেন আজ। প্রাণ উজাড় করে যে যার মতো করে বসন্তকে বরণ করে নিচ্ছেন। তাই রাজশাহী শহর জুড়েই শোভাযাত্রা, কবিতাপাঠ, নাচ আর গানের ছন্দে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে পালন হচ্ছে বাসন্তী উৎসব। বছর ঘুরে নতুন উপলক্ষ পাওয়া রাজশাহীর সংস্কৃতিমনা মানুষগুলো থেমে নেই। ফাল্গুনী উৎসবে তাই যেন লেগেছে স্বপ্নজয়ী তারুণ্যের ঢেউ। এদিকে, সকাল গড়াতেই মহানগরীর বিভিন্ন বিনোদন স্পটেও ঢল নেমেছে তরুণ-তরণী যুবক-যুবতীসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষের।
এবার বসন্ত বরণ ও ভালোবাসা দিবস একই দিনে হওয়ায় ভিন্নমাত্রা পেয়েছে বাসন্তী উৎসব। মেয়েদের পরনে হলুদ রঙের শাড়ি, খোপায় গাঁদা ফুল, আবার কারও কারও খোপায় রঙিন ফুলের রিং, কারও খোপায় আবার দেখা গেছে ফুলের গাজরা। ছেলেদের পরনে হলুদ অথবা সফেদ রঙের পাঞ্জাবি। এমনি বাহারি রঙের পোশাক পরে আজ বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ঘুরতে দেখা যাচ্ছে- নগর যুবাদের। তাদের পাশে আছে মধ্যবয়সী নর-নারী ও কোমল শিশুর দল। সকাল থেকে রাজশাহীর জিয়া শিশু পার্ক, বড়কুঠি পদ্মাপাড়ে, টি-বাঁধ, ভদ্রার শহীদ মনসুর রহমান পার্ক, পদ্মা গার্ডেনসহ অন্যান্য বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কেউ বন্ধু-বান্ধবীকে নিয়ে, কেউ প্রিয়তম, আবার কাউকে পরিবার পরিজন নিয়ে বেড়াচ্ছেন। তবে সূর্য পশ্চিমে গড়িয়ে বিকেল হলেই বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে মানুষের ঢল নামবে।