যে কারণে যুক্তরাজ্যে প্রধানমন্ত্রিত্ব কঠিন

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আর্থার বেলফোরের সহজ চেয়ারটাও এক পর্যায়ে কঠিন হয়ে পড়েছিল। দেশটির সবশেষ ছয়জন প্রধানমন্ত্রীর বিদায় ছিল অস্বস্তিকর। মার্গারেট থ্যাচার ও থেরেসামেকে একটু খারাপভাবেই বিদায় নিতে হয়। বরিস জনসনকে নিয়োগ দেওয়ার সময় রানি বলেছিলেন এমন হলে কেন সবাই এই পদ চাইবে। এর একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হলো হাইপার-ফাস্ট পরিবর্তন ও হাইপার অ্যাকটিভ মিডিয়ার জন্য সব শীর্ষ পদই একই দিকে যায়।

অন্যদিকে জার্মানির চ্যান্সেলর হিসেবে ১৫ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন অ্যাঙ্গেলা মেরকেল। ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বারাক ওবামাও গল্ফ খেলার জন্য যথেষ্ট সময় পেয়েছেন। কিন্তু ডাউনিং স্ট্রিটের বিপদ যেনো কাটছেই না। ল্যাঙ্কাস্টার ইউনিভার্সিটির মার্ক গারনেট যুক্তি উপস্থাপন করে বলেছেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রিত্ব এখন অকার্যকর।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের রাষ্ট্র প্রধানদের চেয়ে বেশি দায়িত্ব পালন করতে হয়। দেশটির প্রধানমন্ত্রীরা একই সঙ্গে সরকার প্রধান, দলের নেতা, ফান্ডের ব্যবস্থাপক, সংসদেও রাখতে হয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তাছাড়া কূটনৈতিক দায়িত্ব, নিজের নির্বাচনী এলাকায়ও কাজ করতে হয় তাদের। কোনো প্রধানমন্ত্রীই তার মেয়াদকালে এসব কাজ ভালোভাবে করতে পারেন না।

এক পর্যায়ে তাদের হতাশা প্রকাশ করতে হয়। টনি ব্লেয়ার এই অগ্নিপরীক্ষাকে স্নায়ু-বিক্ষিপ্ত, অস্বস্তিকর, পেরেক কামড়ানোসহ নানা নেতিবাচক বিশেষণে বিশেষায়িত করেছেন। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর জন্য সব কিছুই ধীরে ধীরে কঠিন হয়। বিশেষ করে সংসদ সদস্যদের মোকাবিলার ক্ষেত্রে। থেরেসা মে বিভিন্ন ইস্যুতে সংসদে ৩৩ বার পরাজিত হন। বরিস জনসন উপলব্ধি করেন সদস্যদের বিদ্রোহী মনোভাবের কারণে ব্রেক্সিট নিয়ে এত টানাপোড়েন তৈরি হয়। অন্যদিকে সংবাদমাধ্যমের ভূমিকায়ও প্রধানমন্ত্রিত্বে প্রভাব পড়ে।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর পদ নিয়ে যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে তার সমাধান কী এমন প্রশ্নে গারনেট মন্ত্রিসভা সরকারের পুরোনো ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারের পক্ষে। যেখানে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন সমান পদধারীদের মধ্যে অন্যতম। কারণ যে ব্যবস্থায় একজন শীর্ষ ব্যক্তিই সব কাজের জন্য দায়ী থাকে, সেখানে কাজ করা খুবই কঠিন।

আরও একটি বাস্তবসম্মত বিকল্প হতে পারে রাষ্ট্রপতিবাদের শক্তিগুলোকে স্বীকৃতি দেওয়া ও একটি সঠিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর বিভাগ তৈরি করা। ব্লেয়ার তার আইকেএ-স্টোর মূল্যের ডাউনিং স্ট্রিট ইউনিট দিয়ে এই কাজটি করার চেষ্টা করেছিলেন। তাছাড়া জনসনের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা ক্যাবিনেট অফিসে একটি নাসা-স্টাইল কন্ট্রোল ইউনিট তৈরি করে বৈশিষ্ট্যগতভাবে এটি করার চেষ্টা করেছিলেন।

সম্প্রতি ট্যাক্স ইস্যুকে কেন্দ্র করে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন লিজ ট্রাস। মাত্র ৪৫ দিনের মাথায় তাকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়। লিজ ট্রাস ছয় সপ্তাহের মেয়াদে একটি ব্যর্থ অর্থনৈতিক পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছেন। তাছাড়া এই সময়ে দলের সদস্যদের মধ্যেও চরম বিভাজন দেখা গেছে। যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে তিনি হতে যাচ্ছেন সবচেয়ে কম সময় দায়িত্বপালনকারী প্রধানমন্ত্রী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *