নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর মোহনপুর মৌগাছি বাজারে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক এজেন্ট শাহিন আলম ও তার ম্যানেজার খোরশেদ গ্রাহকদের অর্ধ কোটি টাকা আত্মসাত করে লাপাত্তা হলে টাকা না পাওয়ায় এজেন্ট ব্যাংক অফিসে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন গ্রাহকরা। এ ঘটনায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দেয়া হয়েছে। গত ২৮ মার্চ শুক্রবার সকালে মৌগাছি বাজার ডিবিবিএল এজেন্ট পয়েন্ট অফিসের সামনে আত্মসাত করা টাকা পাওনার দাবিতে জড়ো হতে থাকে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা। একারণে গ্রাহকরা ব্যাংকে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন।
এঘটনায় ব্যাংক এজেন্ট শাহিন আলম বাদি হয়ে ব্যাংকের ছয় জন গ্রাহককের নামে মোহনপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। যাদের নামে অভিযোগ করা হয়েছে তারা হলেন, উপজেলার মৌগাছি ইউপি’র হরিহরপাড়া গ্রামের ভুগলের ছেলে কাঁচামাল বিক্রেতা রেজাউল (৫৩) ও তার ছেলে মিনারুল (২৯) নুড়িয়াক্ষেত্র গ্রামের জয়েন উদ্দিনের ছেলে মোবারক (৫০), আকতারের ছেলে মোজাহার (৪৩)। বাটুপাড়া গ্রামের আলতাবের ছেলে মিঠু, জয়েন উদ্দিনের ছেলে হবিবর। তালা ঝুলানোর ঘটনাটি তদন্তের দ্বায়িত্বভার পান মোহনপুর থানা এএসআই মতিউর রহমান। অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অভিযুক্ত গ্রাহকদের ব্যাংকের তালা খুলে দিতে বলেন।
গ্রাহকরা তাদের টাকা ফেরত না পাওয়া পর্যন্ত তালা খুলে দিবেনা বলে পুলিশকে জানালে পরিস্থিতি বিবেচনায় সেখান থেকে চলে আসেন পুলিশ। এদিকে পুলিশ ঘটনাস্থল ত্যাগ করার পর সুদে কারবারি প্রতারক শাহিন বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে অভিযুক্ত গ্রাহকদের বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি ও হুমকি ধামকিসহ মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর ছক কসছেন। সে মামলা হতে নিজেকে বাঁচাতে তার ম্যানেজার খোরশেদ এর উপর সকল দায় চাপিয়ে মোহনপুর থানায় মামলা করেছেন। ব্যাংক গ্রাহকদের এতগুলি টাকা আত্মসাত করেও বহাল তবিয়ত ও দাপটের সাথে এলাকায় চলাফেরা করায় টাকা খোয়ানো গ্রাহক ও এলাকার সচেতন সমাজ তার ক্ষমতা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন।
ব্যাংক এজেন্ট শাহিন বিভিন্ন মানুষের মাধ্যমে তার ব্যাংকে তালা ঝুলানোয় মিনারুল নামে একজনকে হুমকি ধামকি দিয়ে বলেছেন তার ব্যাংকে তালা ঝুলানোর ঘটনায় মিনারুলের সাথে তার খেলা হবে। এঘটনায় মিনারুল ও তার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এবিষয়ে সরাসরি সাক্ষাতকারে ম্যানেজার খোরশেদ বলেন, আমি সামান্য বেতনে মেসার্স সরকার ফার্মেসি ডিবিবিএল এজেন্ট ব্যাংকে চাকুরি করতাম।
এজেন্ট শাহিন আমাকে যেভাবে ব্যবহার করতে চেয়েছে চাকুরি হারানোর ভয়ে আমি তার হুকুম মানতে বাধ্য ছিলাম। সে আমাকে বলে, যে গ্রাহকরা অনেকদিন পরে টাকা তুলবে তাদের টার্গেট করবে টাকা জমা দিলে গ্রাহকে মানি রিসিট দিয়ে বলবে নেটের সমস্যা ঠিক হলে টাকা জমা হয়ে যাবে। আমি গ্রাহককে টাকা জমা রশিদ দেই। সে সব সময় সিসি ক্যামেরা অন রেখে আমাকে মনিটর করত।
রাত্রি হলে প্রতিদিনের হিসাব নিকাশ সেরে টাকাগুলো নিয়ে যেত। আমি তাকে বার বার নিষেধ করলেও সে আমাকে অন্যায় অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করত। সে যেসব গ্রাহকের টাকা ব্যাংক হিসাবে জমা না করে নিয়ে গেছে সে সব গ্রাহকের নাম একটি বেগুনী রংয়ের রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ করে রেখেছে এবং তার কাছেই আছে। আমি তার কথা শুনে বিরাট অন্যায় ও ভুল করে ফেলেছি। আমিও চাই সকল গ্রাহক তার টাকা ফেরত পাক।
এব্যাপারে আমি প্রশাসন ও সাংবাদিকদের সাহায্যে চাই। আপনারা তদন্ত করে বের করুন আসল অপরাধী কে? এজেন্ট শাহিন ব্যাংকের শাখা নেওয়ার পর আমার আগে এখানে টেইলর পদে ৩ জন চাকুরী করেছে। তার এধরণের অমানবিক আচরণ ও গ্রাহকদের সাথে প্রতারণা দেখে চাকুরী ছেড়ে সবাই চলে গেছে। এজেন্ট শাহিন অভিনব কৌশলে গ্রাহকের টাকাগুলো আত্মসাত করে এলাকার বিভিন্ন ব্যবসায়ীর মাঝে প্রতি লাখ টাকায় সপ্তাহে ২হাজার টাকা চড়া সুদে ঋন দিত।
সে মৌগাছি ইউপি’র ইলামত গ্রামের পান ব্যবসায়ী ইসলাম ও তার ছেলে সেলিম, ধুরইল পূর্বপাড়া গ্রামের সোহেল এর নামে সুদের টাকা আদায় করতে আদালতে মামলা করেছেন। এছাড়াও তার সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় ধোটাঘাটা কৃষ্ণপুর গ্রামের পান ব্যবসায়ী মিঠুন এলাকা ছাড়া হয়েছে ২বছর আগে। হরিহরপাড়া গ্রামের রেজাউল ও তার ছেলে মিনারুল ব্যাংকে তালা লাগিয়ে দিল কেন এ প্রশ্নের জবাবে ম্যানেজার খোরশেদ বলেন, মিনারুল ব্যবসায়িক কাজে প্রতিদিনই বাইরে থাকে সে যেদিন যেদিন তার টাকার দরকার পড়ে ব্যাংকে এসে ফিঙ্গার দিয়ে চলে যায় এবং বলে তার বাবা পরে এসে টাকাগুলো নিয়ে যাবে।
আমরা এভাবে তার টাকা সে যাকে দিতে বলতো তাকে দিয়ে দিতাম। সর্বশেষ আমি ও এজেন্ট শাহিন ব্যাংকে থাকা অবস্থায় মিনারুল এসে শাহিনের হাতে নগদ ৩২ হাজার টাকা ও ১লাখ ১৮ হাজার টাকার ফিঙ্গার দিয়ে চলে যাওয়ার সময় শাহিনকে বলে আমার আব্বা আসলে টাকাগুলো দিয়ে দিবেন। এরপর ব্যাংকে টাকা না থাকায় সেদিন তার আব্বা রেজাউলকে টাকা দিতে পারেনি শাহিন। পরে শুনছি তাকে এখনো টাকা দেয়নি।
শাহিন গ্রাহকের টাকা মেরে দিয়ে মৌগাছি বাজারে কসমেটিক ও হার্ডওয়ার সামগ্রির দোকান করছেন এছাড়াও নাটোর সদরে আলীশান বাড়ি করেছেন। সে নিজেকে বাঁচাতে আমাকে ব্যবহার করে টাকাগুলো আত্মসাত করে উল্টো আমার নামে মামলা করেছেন। আমি শাহিনের বিচার দাবি করছি। আমি নির্দোষ তার প্রমান আমার কাছে আছে। টাকা আত্মসাতের ঘটনায় গ্রাহকরা এজেন্ট শাহিন তার ম্যানেজার খোরশেদ ও শাহিনের দুলাভাই আরজেদ সরকারের নামে মোহনপুর থানায় মামলা করতে আসলে মামলা নেয়নি পুলিশ এমনই অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী গ্রাহক যাদু বেগমসহ অন্যান্যরা।
ডাচ্-বাংলা এজেন্ট ব্যাংক গ্রাহকদের টাকা এজেন্ট শাহিন ও তার ম্যানেজার আত্মসাত করলেন ব্যাংকের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ মুখে কুলুপ এটে বসে আছেন। বক্তব্য নেওয়ার জন্য ফোন করেও বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি। এব্যাপারে ব্যাংক এজেন্ট শাহিন এর বক্তব্য জানতে একাধিক বার ফোন করলে তার ফোনটি বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এবিষয়ে মোহনপুর থানা কর্মকর্তা ওসি মোহা. সেলিম বাদশাহ বলেন, ব্যাংকে গ্রাহকরা তালা ঝুলানোর ঘটনায় এজেন্ট শাহিনের একটি অভিযোগ পেয়েছি। এছাড়াও ম্যানেজার খোরশেদ এর নামে একটি মামলা করেছে শাহিন।