মাতৃহারা শোকের শক্তিতেই ফোটে নাসিমের রক্তগোলাপ

নাসিম শাহ, বয়স ১৯ বছর ২০৫ দিন। টগবগে রক্তের তরুণ এশিয়া কাপের সুপার ফোরে আফগানিস্তানের বিপক্ষের ম্যাচে দেখিয়েছেন তারুণ্যের শক্তি। তার সাহস দেখে অবাক চোখে তাকিয়ে রয়েছে গোটা ক্রিকেট দুনিয়া। আরো কয়েক বছর অন্তত এই বিস্ময়ের রেশ থেকে যাবে, অবিশ্বাস্য কোনো ঘটনায় নাসিমকে মনে পড়বেই। দলের প্রায় নিশ্চিত পরাজয়টাকে পরপর দুই ছক্কা হাঁকিয়ে বিজয়ে পরিণত করেছেন নাসিম।

এমন অবিশ্বাস্য কাণ্ডের পর নাসিমের উদযাপনের ধরনটাও চোখে পড়ার মতো। মনে হচ্ছে, কোনো তরুণ অবিশ্বাস্য কিছু করার পর তার মাকে সামনে পেয়ে বাঁধনহারা উল্লাসে মেতে উঠেছেন। হয়তো নাসিমের এই উদযাপনের আড়ালেও আছেন তার মা।
এই ক্রিকেট খেলতে গিয়েই তো মাকে শেষবারের মতো দেখা হয়নি নাসিমের। ২০১৯ সালে ১৬ বছর বয়সে নাসিম যখন মায়ের মৃত্যু খবর পেলেন, তখন তিনি খেলছিলেন অস্ট্রেলিয়ায় পার্থে, টেস্টে। তাই খেলা ছেড়ে তার দেশে ফেরা হয়নি, মৃত মায়ের মুখটাও তাই হয়নি দেখা।

সেবার মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে নাসিম ভেঙে পড়েছিলেন কান্নায়, ফিরতে চেয়েছিলেন দেশে। তবে ৯০০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে নাসিমের অন্তত ৪৮ ঘণ্টা লাগত, মায়ের দাফন কাফন সম্পন্ন করতে ততক্ষণ অপেক্ষা করতে রাজি ছিল না পরিবার। এদিকে আবার বিমানের টিকেট ম্যানেজ করাও যাচ্ছিল না। সবমিলিয়ে ভাইয়ের কথায় নাসিম অস্ট্রেলিয়ায় থেকে যেতে রাজি হন।

এবারের এশিয়া কাপও দেখছে নাসিমের সেই শোকের শক্তি। প্রথমবারের মতো এই আসরে খেলা নাসিম ভারতের বিপক্ষের প্রথম ম্যাচে বল হাতে ২৭ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ২ উইকেট। যদিও সেই ম্যাচে দল জেতেনি। তবে চোট সামলে বারবার মাঠে পড়ে যাওয়া নাসিম বল করে গেছেন। আর নাসিমের এই কাজ সবার মন জয় করেছিল। পেয়েছিলেন অকুণ্ঠ বাহবা। হংকংয়ের বিপক্ষে ৪ ওভারে ৭ রান দিয়ে নাসিম নিয়েছিলেন ২ উইকেট।

ভারতের বিপক্ষের সুপার ফোরের ম্যাচে ছিলেন খরুচে। ৪ ওভারে ৪৫ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ১ উইকেট। তবে আফগানদের বিপক্ষে আবারও নাসিমের দারুণ কামব্যাক। চার ওভারে ১৯ রান দিয়ে নিয়েছেন ১ উইকেট। আর ব্যাট হাতে ৩৫০ স্ট্রাইকরেটে ৪ বলে ১৪ রান করে দলকে জেতালেন! এককথায় এটা অবিশ্বাস্য! অবিশ্বাস্য পর্যায়ের মনোবল না থাকলে ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়ে এমন রক্তগোলাপ ফোটানো সম্ভব কী?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *