বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কারান্তরীণ। জামিন নিয়েও তৈরি হয়েছে এক ধরনের অনিশ্চয়তা। ঢাকার বিভাগীয় মহাসমাবেশের আগে নেতাকর্মীরা আটক হওয়ার পরও দল বেশ চাঙা। দলীয় এমপিরাও সংসদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ এ মুহূর্তে দলের মহাসচিবের অবর্তমানে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব কে পাচ্ছেন তা নিয়ে চলছে নানান গুঞ্জন। এরই মধ্যে একজন যুগ্ম-মহাসচিবকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে গুজবও রটেছে। যদিও বিএনপি বলছে, এই মুহূর্তে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে মহাসচিব পদে কাউকে দায়িত্ব দেওয়ার চিন্তা নেই।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে দলের কিছু নেতাকর্মী ফেসবুকে প্রচারণা চালান, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব করা হয়েছে। মির্জা ফখরুল মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করবেন। সূত্রমতে, শুধু ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনই নন, মহাসচিব পদের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন দলের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরাও। দলের চেয়ারম্যান হওয়ার স্বপ্ন অনেকে না দেখলেও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মহাসচিব পদের জন্য অনেকেই লালায়িত।
স্থায়ী কমিটির সবচেয়ে সিনিয়র সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পেতে পারেন বলে কেউ কেউ মনে করছেন। আবার কেউ বলছেন, বৈশ্বিক রাজনীতিতে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ এবং কর্মী ধরে রাখতে আর্থিক বিনিয়োগ উভয় ক্ষেত্রে স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এবং আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে আছেন। সে জায়গা থেকে এই দুজনের একজনকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।
ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের গুঞ্জন প্রসঙ্গে মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, এখানে দায়িত্ব দেওয়ার সুযোগ নেই। যেহেতু মহাসচিব গ্রেফতার, সব নেতাকর্মী মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করবেন। তারেক রহমান বলেছেন, নেতারা গ্রেফতার হলে শেষ কর্মী পর্যন্ত দায়িত্ব নেবে। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব দেওয়া হলে সেই দায়িত্ব পালনের মানসিকতা রাখেন কি না জানতে চাইলে খোকন বলেন, যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। দলের কর্মী হিসেবে যে কোনো দায়িত্ব পালন করি।
ছাত্রদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মামুনুর রশিদ মামুন এ প্রসঙ্গে বলেন, দলের গঠনতন্ত্রে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে স্পষ্ট কিছু বলা নেই। দলে এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে আমার জানা নেই। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যদি কেউ এই দাবি করেন তাহলে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে আমার জন্য এটা খুবই বিব্রতকর। ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, দপ্তরের দায়িত্বে থাকা সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গ্রেফতারের পর মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত চিঠি দিয়ে আমাকে দপ্তরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবও যদি কাউকে করা হতো সেটাও চিঠি দিয়ে জানানো হতো প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে। আপনারা জানতে পারতেন। দলে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব নিয়ে কোনো চিন্তা আছে কি না জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব নিয়ে ভাবছি না। রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন খান মোহন বলেন, বিএনপিতে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের রেওয়াজ নেই বললেই চলে। অতীতে মহাসচিব হয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কারাগারে গেলে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব করা হয়নি।
‘তবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বের হতে দেরি হলে সেক্ষেত্রে বিএনপি ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের চিন্তা করতে পারে। এক্ষেত্রে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব থেকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব পদে আসার মতো এই মুহূর্তে কাউকে দেখি না। বিদেশি শক্তির সঙ্গে এই মুহূর্তে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তিনি এই গুরুদায়িত্ব পেতে পারেন।
আর খন্দকার মোশাররফ হোসেন মহাসচিবের দায়িত্ব নেবেন কি না সে বিষয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে। আরও আগে হলে হয়তো নিতে পারতেন।’ তিনি আরও বলেন, বিএনপিতে এখন যারা বেঁচে আছেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে সিনিয়র খন্দকার মোশাররফ হোসেন। যিনি জিয়াউর রহমানের সঙ্গে থেকে রাজনীতি শুরু করে এখনো বিএনপিতে আছেন। খন্দকার মোশাররফ হলে হবেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। দলে খালেদা জিয়ার পরই তার অবস্থান।