বিশ্বকাপের দল থেকে বাদ পড়ার শঙ্কায় কি মুশফিকের এই সিদ্ধান্ত!

ঠিক বিনা মেঘে বজ্রপাত বলা যায় না। যাবেও না। কারণ, এশিয়া কাপে তার রান না পাওয়া নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছিল ভক্ত ও সমর্থককুল। বয়স হয়েছে। শরীর যতই ফিট থাকুন না কেন, তার রিফ্লেক্স কমে গেছে। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে যতটা আক্রমণাত্মক ব্যাটিং দরকার, তা করতে পারছেন না মুশফিকুর রহিম। তাই দিনকে দিন তার পারফরমেন্সও হচ্ছে খারাপ। ব্যাটে রান নেই একদমই। সামনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, এখনই তার অবসর নেয়ার সেরা সময়। ভক্ত ও সমর্থকদের একটা বড় অংশের দাবি ছিল এটা। এক কথায় সমর্থকদের বড় অংশের মুশফিক বিরোধী অবস্থান শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ম্যাচের পর থেকেই।

২ সেপ্টেম্বর রাত থেকেই ফেসবুক সরব হয়েছে মুশফিক বিরোধী লিখনীতে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের দাবিও উঠেছে জোরে সোরে। ঠিক এ পরিস্থিতিতেই টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট থেকে সড়ে দাঁড়ানোর ঘোষণা মুশফিকের। তবে কি ভক্ত ও সমর্থকদের প্রবল বিরোধিতার কারণেই টি-টোয়েন্টি থেকে সরে দাঁড়ালেন মুশফিক? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে নিয়ে নানা ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপ হচ্ছে। তীর্যক মন্তব্যে সয়লাব ফেসবুক- তাতে মান-মর্যাদা হচ্ছে ক্ষুণ্ন। তাই হঠাৎ টি টোয়েন্টি না খেলার ঘোষণা?

নাকি টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে চাপ ছিল? কিংবা বোর্ড প্রধান বা বিসিবির পক্ষ থেকেই তাকে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট থেকে সরে টেস্ট এবং ওয়ানডেতে মনোযোগি হওয়ার কথা বলা হয়েছে? এদিকে আজ সকালে মুশফিকের ফেসবুক স্ট্যাটাসে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট থেকে অবসরের ঘোষণা দেয়ার পর বিসিবি সিনিয়র পরিচালক ও ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির প্রধান জালাল ইউনুসের কথায় পরিষ্কার, মুশফিকের এ অবসরের ঘোষণা পূর্ব পরিকল্পিত নয়। এবং এ সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে বোর্ডের নীতি নির্ধারক মহলের সঙ্গে কোনোরকম কথা-বার্তাও হয়নি মুশফিকের।

আর তা হয়নি বলেই  সঙ্গে আলাপে জালাল ইউনুস বলেছেন, ‘আমি তো কিছুই জানি না। মুশফিক আমাদের (বিসিবির) সঙ্গে আগে টি-টোয়েন্টি ফরম্যট ছাড়া নিয়ে কোনো কথা বলেনি।’ প্রায় একই তথ্য মিলেছে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর কথায়ও। নান্নু জাগো নিউজকে জানিয়েছেন, মুশফিক টি-টোয়েন্টি ফরম্যট থেকে সরে দাঁড়াবেন, এমন খবর তিনিও জানতেন না। তার সঙ্গেও এ নিয়ে কোন কথাও বলেননি মুশফিক।

নান্নু বলেন, ‘মুশফিক ফেসবুক স্ট্যাটাস দেয়ার সময় আমাকে একটি এসএমএস দিয়েছে। সেখানে তার টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট থেকে অবসরের কথা উল্লেখ ছিল।’ জালাল  জানিয়েছেন টিম ম্যানেজমেন্ট কিংবা বোর্ড থেকে মুশফিকের ওপর কোনো চাপ ছিল না। আমরা তাকে শুধু না, কাউকেই কখনো কোনো ফরম্যাট বা জাতীয় দল থেকে অবসরের ঘোষণা দেয়ার ব্যাপারে চাপ দেই না।

এ মন্তব্যেই পরিষ্কার, মুশফিককেও এমন কোনো কথাই বলা হয়নি বিসিবির পক্ষ থেকে। এটা একান্তই তার নিজের সিদ্ধান্ত। তাহলে প্রশ্ন জাগে কেন কী কারণে মুশফিক এতবড় সিদ্ধান্ত নিলেন? তা নিয়েও আছে নানা মত। একপক্ষের দাবি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভক্ত, সমর্থকদের তুমুল বিরোধিতা এবং তীর্যক মন্তব্য আর কটুক্তির কারণেই মুশফিক এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

তবে পাশাপাশি আরও একটি কথাও শোনা যাচ্ছে, বোর্ডের উচ্চ পর্যায়ের এক দায়িত্বশীল সূত্রর খবর, নিজের টি-টোয়েন্টি ভবিষ্যত নিয়ে ভেবে-চিন্তেই এ সিদ্ধান্ত মুশফিকের। ভেতরের খবর, ‘আগামী অক্টোবর-নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ স্কোয়াডে মুশফিকের না থাকার সম্ভাবনাই ছিল বেশি। মুশফিক যে কোনোভাবেই হোক তা টের পেয়েছেন। তিনি বুঝতে পেরেছেন, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ভাবনা ও পরিকল্পনায় নেই তিনি।’

কী করে থাকবেন? নুরুল হাসান সোহান আর লিটন দাস ছিলেন না বলে এবার কিপিং করার সুযোগ মিলেছে। ব্যাট হাতে দলকে কিছু দিতে পারলে হয়তো উৎরে যেতেন। ভাইটাল ক্যাচ মিস তো (বাংলাদেশের বিপক্ষে ফিফটি করা কুশল মেন্ডিসের ক্যাচ গ্লাভসে নিয়েও ফেলে দেয়ার পাশাপাশি কুশলের ব্যাট থেকে আসা ‘স্নিক’ ধরেও রিভিউ চাননি।

পরে টিভি রিপ্লেতে পরিষ্কার দেখা গেছে, বল কুশল মেন্ডিসের ব্যাটের ভেতরের কানায় লেগে তার গ্লাভসে গিয়ে জমা পড়ে। অথচ মুশফিক তা ধরেও বুঝতে পারেননি। পাশাপাশি তার ব্যাট একদমই কথা বলেনি। আফগানিস্তানের সঙ্গে ১ আর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাত্র ৪ রানে আউট হয়েছেন। দিনকাল ভাল যাচ্ছেনা এক বছর ধরেই। সেই গত বছর ২৪ অক্টোবর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শারজায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩৭ বলে ৫৭‘ই শেষ ফিফটি। তারপর ৭ ম্যাচে (২৯, ৮, ০, ১, ৩০, ১ ও ৪) রান করেছেন মোটে ৭৩।

স্ট্রাইকরেটের অবস্থাও খারাপ। এই ৭ ম্যাচে মাত্র ২ বার তার স্ট্রাইকরেট ছিল ১০০ প্লাস। বাকি খেলাগুলোয় তা কখনো ৫০.০০ এমনকি ২৫.০০-‘এ নেমে এসেছে। এই অবস্থায় তাকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বিবেচনায় আনার কথাও না। তাই ধরে নেয়া হচ্ছে হয়তো নিজের ভবিষ্যত বুঝে ও ভেবে-চিন্তেই মুশফিক নিজ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *