বিএনপির গণঅবস্থান কর্মসূচিকে ঘিরে যে কোনো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি এড়াতে রাজধানীজুড়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। বুধবার (১১ জানুয়ারি) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেছে দলটির নেতাকর্মীরা। ১০ দফাসহ বিদ্যুতের দাম কমানোর দাবিতে আগামী ১৬ জানুয়ারি ঢাকাসহ সারাদেশে জেলা ও উপজেলা, মহানগর ও পৌর শহরে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল ঘোষণা করেছে বিএনপি।
আজ বুধবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে নয়াপল্টনে গণঅবস্থান কর্মসূচি থেকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। মির্জা ফখরুল বলেন, অবিলম্বে সরকারকে পদত্যাগ ও সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ আজ বলছে তারা আর পারে না। চাল কিনতে পারে না। খাদ্য কিনতে পারে না। ওয়াসার এমডি আমেরিকায় ১৪টি বাড়ি কিনেছেন।
তিনি কত হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন? আজ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। তারা সব ব্যাংক লুটে ফোকলা করে দিয়েছে। সরকার লুটের রাজ্য গড়ে তুলেছে। তিনি বলেন, সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে সবকিছুকে নিয়ন্ত্রণ করে আবারো একদলীয় শাসন কায়েম করা। আমরা সেটা হতে দেব না। আমরা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব। আমাদের নেতা দেশনায়ক তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। আজ জনগণ জেগে উঠেছে। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা জেগে উঠেছে। গণমাধ্যমও ভূমিকা রাখছে।
ফখরুল বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করেও ১০ ডিসেম্বর ঢাকার গণসমাবেশ বানচাল করা যায়নি। ঢাকাসহ দেশের মানুষ সফল করেছে। আসুন আমরা ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে নতুন প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য দেশ গড়তে ঐক্যবদ্ধ হই। গণ-অবস্থান কর্মসূচির সভাপতিত্ব করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। সঞ্চালনায় ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু ও উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না, মহিলা দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ।
এদিকে সকাল থেকেই নয়াপল্টন, কাকরাইল, বিজয়নগর, পল্টন ও মতিঝিলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে জলকামান, সাঁজোয়া যান, প্রিজনভ্যান। এ বিষয়ে ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হায়াতুল ইসলাম খান বলেন, বিএনপিকে শান্তিপূর্ণভাবে গণঅবস্থানের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনসহ সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে।
বিএনপির এ কর্মসূচিকে ঘিরে ঢাকার নয়াপল্টন এলাকার বাইরে বিভিন্ন পয়েন্টে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। এ বিষয়ে মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক সাংবাদিকদের বলেন, রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ না করে বিএনপিকে শান্তিপূর্ণভাবে গণঅবস্থান কর্মসূচি করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এদিন লাখ লাখ মানুষ ঢাকা শহরে অফিসে যাতায়াত করবেন, সেজন্য যান চলাচল যেন বন্ধ না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে।