সারাদেশের ৪ হাজার ৮০৬টি কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এবার মোট আসন ২২ লাখ ৬৯ হাজার ৪২টি। আবেদন পড়েছে প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন ১ হাজার ৫৪টি কলেজে আসন ৫ লাখ ২১ হাজারের মতো। এর মধ্যে সরকারি-বেসরকারি প্রথম সারির কলেজ রয়েছে অন্তত ২০টি। সেখানে বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও মানবিক বিভাগ মিলে আসন প্রায় ৩৫ হাজার। অথচ ঢাকা বোর্ডে শুধু জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী রয়েছে ৬৪ হাজার ৯৮৪ জন। সর্বোচ্চ জিপিএ পেয়েও প্রথম সারির কলেজে ভর্তি হতে পারবে না অন্তত ৩০ হাজার শিক্ষার্থী। সারাদেশে এভাবে হিসাব করলে এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়াবে লক্ষাধিক।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তিতে গত ৮ থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হয়। এতে সারাদেশে আবেদন পড়েছে ১৩ লাখ ৪৬ হাজার ১৪৬টি। আগামী ৩১ ডিসেম্বর রাতে ফল প্রকাশ করা হবে। প্রথম ধাপে ফল প্রকাশের পর দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের আবেদন, যাচাই-বাছাই ও ফল প্রকাশ করা হবে। পাঠদান শুরু ২ ফেব্রুয়ারি থেকে।
শিক্ষা বোর্ডের সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রথম ধাপের আবেদনে ঢাকার ২০ কলেজে বেশি আবেদন এসেছে। এসব কলেজে আবেদন জমা পড়েছে নির্ধারিত আসনের তিন থেকে পাঁচগুণ পর্যন্ত। অধিকাংশ আবেদনকারী জিপিএ-৫ পাওয়া। এসব কলেজে আসন রয়েছে ৩৫ হাজারের মতো। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের আওতায় এবার জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী প্রায় ৬৫ হাজার। ফলে প্রথম ধাপে শুধু ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে ৩০ হাজার সর্বোচ্চ ফলধারী শিক্ষার্থী আবেদন করেও ভর্তি থেকে বঞ্চিত হবে। সারাদেশে এমন দুই শতাধিক কলেজে দেড় লাখ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পেলেও লক্ষাধিক জিপিএ-৫ ধারীকে পড়তে হবে তুলনামূলক কম মানের প্রতিষ্ঠানে।
আসনের বেশি আবেদন যেসব কলেজে
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রথম ধাপে আবেদন বেশি পাওয়া কলেজের মধ্যে ২০টি কলেজে দুই লাখের বেশি আবেদন জমা হয়েছে। এসব কলেজে আসন সংখ্যা ৩৫ হাজারের মতো। তার মধ্যে- ঢাকা ইম্পেরিয়াল কলেজে তিন বিভাগে ১৮শ আসন, ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ১৫০, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে ২৫শ ৭০, শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজে ৮শ, বিএএফ শাহীন কলেজে ২ হাজার ৯৫, বিএফ শাহীন কুর্মিটোলা কলেজে ৩ হাজার ৭৩২, ঢাকা কলেজে ১২শ, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ কলেজে ২ হাজার ৬০, মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে ৭শ ৫০, ঢাকা কর্মাস কলেজে ৩ হাজার ৬১০, সরকারি বাংলা কলেজে ১৬শ ৮০, ন্যাশনাল আইডিয়াল কলেজে ৮শ ৮৫, ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজে ১১শ ২৫,
ঢাকা উদয়ন গভ. কলেজে ১১শ ২৫, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ১১শ ৭০, সিদ্ধেশরী গার্লস কলেজে ১২শ ৩০, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ২৫শ ৬১, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজে ২৫শ এবং গভ. সায়েন্স কলেজে ৩ হাজার ৭৭৮টিসহ মোট ৩৫ হাজার আসন রয়েছে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক আবু তালেব মো. মোয়াজ্জেম হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, একাদশ শ্রেণিতে প্রতি বছর সারাদেশে ১৫ লাখ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। মোট আসন রয়েছে সাড়ে ২২ লাখের বেশি। এর বাইরে মেডিকেল টেকনোলজি, পলিটেকনিক্যাল রয়েছে। কিছু শিক্ষার্থী বিদেশে পড়তে যায়।
তিনি বলেন, সুনামধারী কলেজে শিক্ষার্থীদের ভর্তির আগ্রহ বেশি থাকে। ভালো ফলধারী অধিকাংশ শিক্ষার্থী এসব প্রতিষ্ঠানে আবেদন করে। এ ধরনের কলেজের সংখ্যা কম হওয়ায় অনেকে জিপিএ-৫ পেয়েও পছন্দের কলেজে ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। তবে এসব কলেজে সুযোগ না পেলে যে তার মেধা নষ্ট হবে, বিষয়টি তাও নয়।
বিভাগভিত্তিক কলেজের সংখ্যা
এবার সারাদেশে ৪ হাজার ৮০৬টি কলেজে অনলাইনে ভর্তি শুরু হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের আওতায় ১ হাজার ৬৭টি, কুমিল্লা বোর্ডের ৪৩১টি, রাজশাহী বোর্ডে ৭৯৮টি, যশোর বোর্ডে ৫৮৩টি, চট্টগ্রাম বোর্ডে ২৮১টি, বরিশাল বোর্ডে ৩৫৩টি, সিলেট বোর্ডে ৩০৯টি, দিনাজপুর বোর্ডে ৬৮৮টি এবং ময়মনসিংহ বোর্ডে ২৯৬টি কলেজ রয়েছে। এর বাইরে মাদরাসা বোর্ডের অধীনে ২ হাজার ৭৭০টি কলেজে আসন রয়েছে ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৫৫টি। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ২ লাখের মতো আসন রয়েছে। সব মিলে এবার উচ্চমাধ্যমিক ও সমমানে ভর্তিতে আসন আছে ২২ লাখ ৬৯ হাজার ৪২টি।
ভুয়া আবেদনের অভিযোগ
২০২৩ সালের উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তির আবেদন শুরু হওয়ার পর বেশ কিছু অভিযোগ ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে জমা হয়। সেখানে অটো আবেদনসহ নানা ধরনের সংশোধনের জন্য শিক্ষার্থীরা লিখিতভাবে অভিযোগ জানায়। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে বোর্ড থেকে সেসব বাতিল করে অভিযোগকারীদের নতুনভাবে আবেদন করার সুযোগ দেয়।
অভিযোগকারী একজন শিক্ষার্থী জানান, অনলাইন ভর্তির আবেদন গত ৮ ডিসেম্বর শুরু হলেও গত ১০ ডিসেম্বর আবেদন করতে দোকানে গেলে দেখি আমার রেজিস্ট্রেশন দিয়ে আবেদন করা হয়ে গেছে। অনেক চেষ্টা করেও আর আবেদন করতে না পেরে বোর্ডে এসে অভিযোগ করলে সেটি বাতিল করা হয়। এরপর নতুনভাবে আবেদন করেছেন বলে জানান।
জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার জাগো নিউজকে বলেন, একাদশে ভর্তির আবেদন চলাকালীন প্রায় তিনশোর মতো অভিযোগ আসে। অধিকাংশ আবেদনকারী নিজের ভুল সংশোধনের জন্য আবেদন করে। কিছু ভুয়া আবেদনেরও অভিযোগ আসে। তবে পাঁচটি কলেজ নির্বাচন করে আবেদন করতে হয় বলে কারা এসব করেছে সেটি চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। অভিযোগের সব আবেদন বাতিল করা হয়েছে।
তিনি বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠান এ ধরনের জালিয়াতি করলেও সেটি কাজে আসবে না, যেহেতু ন্যূনতম পাঁচটি কলেজ নির্বাচন করতে হয়। সেখানে একজন শিক্ষার্থী যে কলেজে প্রথম নির্বাচিত হবে সেটি অটোমাইগ্রেশনের মাধ্যমে অটোমেটিক উপরের দিকে (আসন শূন্য থাকা সাপেক্ষে) যেতে থাকবে। আবেদনকারীর মেধাক্রম অনুযায়ী নির্ধারিত স্থানে এসে সেটি বন্ধ হবে।
ভর্তি সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে কোনো ধরনের প্রতারণা ও বাড়তি অর্থ আদায় করলে তাদের প্যানেল এবং পাঠদানের অনুমোদন বাতিলসহ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। এদিকে দ্বিতীয় ধাপের আবেদন ৯ থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে। এ ধাপের ফল ১২ জানুয়ারি (রাত ৮টায়) প্রকাশ করা হবে। নিশ্চয়ন চলবে ১৩ থেকে ১৪ জানুয়ারি। তৃতীয় ধাপের এ আবেদন ১৬ জানুয়ারি ও ফল প্রকাশ ১৮ জানুয়ারি নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ধাপের নিশ্চয়ন ১৯ থেকে ২০ জানয়ারি পর্যন্ত। যারা ভর্তির জন্য নির্বাচিত হবে তাদের ২২ থেকে ২৬ জানুয়ারির মধ্যে ভর্তি হতে হবে। ক্লাস শুরু হবে ১ ফেব্রুয়ারি।