প্রথমে করোনা মহামারির অভিঘাত, এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সারা বিশ্বেই মূল্যস্ফীতি ঘটেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত ৩০ বছরের মধ্যে বিশ্বে মূল্যস্ফীতি এখন সবচেয়ে বেশি। এর ঢেউ বাংলাদেশেও এসে পড়েছে। বাজারে সব পণ্যের দাম বেড়েছে। আবার ব্যবসায়ীরাও সব সময় বাড়তি মুনাফা করতে চান। তাঁরা সুযোগ পেলে অতিরিক্ত মুনাফা করার উপায়গুলো কাজে লাগান। এটাও এক ধরনের বাজারপ্রবণতা। আবার দেশে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পেছনে বরাবরই সরবরাহকারীদের মধ্যে জোট গড়ে ওঠার অভিযোগ আছে। সরবরাহ ঘাটতিকে ব্যবহার করে সুবিধা নেওয়ার জন্য পুরো বাজারকে আতঙ্কে ফেলে দিয়ে সুবিধা আদায় করে নেওয়ার অভিযোগও তো নতুন নয়।
আমাদের দেশে এরই মধ্যে যে মূল্যস্ফীতি ঘটে গেছে, তা মোকাবেলা করার কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা সেভাবে কি দৃশ্যমান হচ্ছে? অতিদরিদ্র বা নিম্ন আয়ের লোকের পাশাপাশি নিম্নমধ্যবিত্ত, এমনকি মধ্যবিত্তের একটি বড় অংশের অবস্থাও ভালো নয়। তাদের অনেকের আয় বৃদ্ধির কোনো সুযোগ নেই। অনেকের আয় খুবই কম বা অনেকে সঞ্চয়ের ওপর নির্ভর করে কোনো রকমে চলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর অর্থ হচ্ছে অর্থনীতিতে যে পরিমাণ আয় উৎপন্ন হচ্ছে, সেই আয়ের সঙ্গে সমাজের এই শ্রেণির মানুষের কোনো সংযুক্তি নেই।
অর্থাৎ তাদের কাছে আয়টা প্রবাহিত হচ্ছে না। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সাধারণ মানুষ কিছুতেই তাল মেলাতে পারছে না। অথচ দফায় দফায় জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। স্বাভাবিকভাবেই সরকারের এখন প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত মূল্যস্ফীতির দুর্ভোগ কিভাবে কমানো যায়, সেই ব্যবস্থা নেওয়া। গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় দেশজুড়ে খোলাবাজারে চাল ও আটা বিক্রি শুরু হয়েছে। সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর—এই তিন মাস খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে বিতরণ করা হবে চাল ও আটা।
ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে টিসিবি ভোজ্য তেল, চিনি ও মসুর ডালের পাশাপাশি ১০ কেজি করে চাল বিক্রি করছে। দরিদ্র মানুষ স্বল্প আয়ে চলতে পারছে না কিংবা মূল্যস্ফীতির সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারছে না। সুতরাং বাজার নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি এসব দরিদ্র লোকের জন্য কিছু ব্যবস্থা করতে হবে, তাদের সরকারি সহায়তা দিয়ে যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের করণীয় হচ্ছে টিসিবির মাধ্যমে পণ্য বিক্রি আরো বাড়ানো।
এটাকে উপজেলা পর্যায়ে নিতে হবে, গ্রামগঞ্জের হাটবাজারে নিতে হবে। আমরা একটি স্থিতিশীল বাজারব্যবস্থা চাই। বাজার সিন্ডিকেট যাতে প্রভাব বিস্তার করতে না পারে সে জন্য সরকারের দৃঢ় পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রেখে ভোক্তাদের মধ্যে আস্থা ফেরাতে হবে। সরকার সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা করে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধে সব ব্যবস্থা নেবে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।