গতি নেই ঢাকা ওয়াসার স্যুয়ারেজ সিস্টেম উন্নয়ন প্রকল্পে। প্রায় ৩ বছর (২ বছর ৮ মাস) পেরিয়ে গেলেও সর্বোচ্চ অগ্রগতি হয়েছে অফিসার বেতন-ভাতা ও সরবরাহ সেবা খাতে। এছাড়া বাকি ১২টি খাতের অগ্রগতি রীতিমতো তলানিতে। প্রকল্পের ক্রমপুঞ্জিত বাস্তবায়ন হয়েছে ৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ। ব্যয় হয়েছে ৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, অর্থাৎ আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ১ শতাংশেরও কম। এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতিযোগিতামূলক ঠিকাদার না পাওয়া, প্যাকেজ বড় হওয়া, অমীমাংসিত জনবল ইস্যু, নতুন সম্ভাব্যতা সমীক্ষার পরামর্শক নিয়োগে বিলম্বসহ নানা কারণে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে প্রকল্পটিতে (ঢাকা স্যানিটেশন ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট)।
বিশ্বব্যাংকের ঋণে স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় এটি বাস্তবায়ন করছে ঢাকা ওয়াসা। ৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্পটির পিআইসি (প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটি বা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) সভা। ওই সভা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ শনিবার যুগান্তরকে বলেন, প্রকল্পের বাস্তবায়ন যদি এই অবস্থা হয় তাহলে অবশ্যই মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকে। এক্ষেত্রে দেখতে হবে সমস্যা কোথায়। যদি ডিজাইনে সমস্যা থাকে তাহলে অবশ্যই সেটি প্রকল্প নেওয়ার আগেই সমাধান করা উচিত ছিল। এছাড়া কি ধরনের জটিলতা হতে পারে এগুলো আগে থেকেই বুঝেশুনে প্রকল্প নেওয়া দরকার। বাস্তবায়ন পর্যায়ে এসে এখন জটিলতার কথা বলাটা পরিকল্পনা শৃঙ্খলার পরিপন্থি কাজ।
সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮৫৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৯৯৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা এবং বিশ্বব্যাংকের ঋণ থেকে ২ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। প্রকল্পটি প্রধানত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় বাস্তবায়ন হবে। এর মধ্যে অন্যতম হলো-কলাবাগান, মগবাজার, শাহবাগ, ইস্কাটন, আরামবাগ, পল্টন এবং শহীদবাগ এলাকা। আরও আছে মতিঝিল, রামপুরা, তালতলা, বাসাবো, গোলাপবাগ, আহমেদবাগ, সায়েদাবাদ, গোড়ান, বাগানবাড়ি, খিলগাঁও, পশ্চিম নন্দীপাড়া, পূর্ব নন্দীপাড়া, সবুজবাগ, নতুনপাড়া এবং রাজারবাগ এলাকা।
সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় আগস্ট পর্যন্ত সর্বোচ্চ ব্যয় হয়েছে অফিসারদের বেতন ও ভাতায় ২ কোটি ১১ লাখ টাকা। এ ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন অগ্রগতি হয়েছে ৩০ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এছাড়া সরবরাহ সেবা খাতে ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ৮৫ লাখ ৪৯ হাজার টাকা, এ খাতে অগ্রগতি ৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ। তলানিতে থাকা অন্যান্য খাতগুলোর মধ্যে উন্নয়ন আমদানি শুল্ক ও ভ্যাট খাতে শূন্য ব্যয়। এছাড়া অন্যান্য রাজস্ব ব্যয় ৬৮ লাখ টাকা। সম্পদ সংগ্রহ বা ক্রয় খাতে ৫৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা। রিকনস্ট্রাকশন, এক্সপানশন অ্যান্ড
অপারেশন অব পাগলা প্যাকেজে শূন্য ব্যয়। ১২ কিলোমিটার রিকনস্ট্রাকশন অব ইস্টার্ন ট্রাংক মেইন (প্রধান লাইন) প্যাকেজে শূন্য ব্যয় হলেও বাস্তব অগ্রগতি ৫ দশমিক ৬১ শতাংশ। ৬ কিলোমিটারের ওয়েস্টার্ন ট্রাংক মেইন প্যাকেজে শূন্য ব্যয় হলেও বাস্তব অগ্রগতি ৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ। রিকনস্ট্রাকশন, নিউ কনস্ট্রাকশন বা রিহ্যাবিলিটেশন অব স্যুয়ারেজ নেটওয়ার্ক ইন জোন-এ প্যাকেজে এক টাকাও খরচ হয়নি, কিন্তু বাস্তব অগ্রগতি ৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এ খাতের জোন-বি’র অগ্রগতি ৫ দশমিক ৬২ শতাংশ, আর্থিক অগ্রগতি শূন্য। জোন-সি’র অগ্রগতি ১ দশমিক ৭২ শতাংশ, আর্থিক অগ্রগতি শূন্য। অন্যান্য পূর্ত কাজের ব্যয় হয়েছে ৬৪ লাখ ২৯ হাজার টাকা, বাস্তব অগ্রগতি ৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ। রোড কাটিং খাতের কোনো অগ্রগতিই নেই। ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন খাতের কোনো অগ্রগতি নেই।
পিআইসি সভায় প্রকল্প পরিচালক রফিকুল ইসলাম জানান, স্লাজ ম্যানেজমেন্টের (বর্জ্য ব্যবস্থাপনা) জন্য এর আগে অনুষ্ঠিত পিএসসি সভায় একটি প্ল্যান্ট স্থাপনের সুপারিশ দেওয়া হয়। এ কাজের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করতে একটি নতুন প্যাকেজ প্রকল্পে যুক্ত করতে প্রস্তাব দেওয়া হয় পরিকল্পনা কমিশনে। সেখান থেকে কিছু বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। এগুলোর উত্তর দিতে ১৩ জুন স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া এই প্ল্যান্টের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের ব্যাপারে বিশ্বব্যাংক ট্রাস্ট ফান্ড থেকে আপাতত অর্থ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানা গেছে। এ অবস্থায় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) থেকে বিশ্বব্যাংকে পুনরায় প্রস্তাব পাঠাতে হবে।
এতে পরবর্তী মিশনে অর্থায়নের বিষয়ে সিদ্ধান্ত পাওয়া যেতে পারে। এ সময় পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি ড. সোহরাব হোসেন বলেন, এই ধরনের প্ল্যান্ট স্থাপন করলে কিছু পরিমাণ ফুয়েল গ্যাস ও হেবি মেটাল ইত্যাদি পাওয়া যাবে। সুতরাং সম্ভাব্যতা সমীক্ষার সময় এগুলোর স্ট্যাটাস পরিবেশ অধিদপ্তরের জানা দরকার। এর উত্তরে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ওই সময় পরিবেশ অধিদপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। ওই সভায় জানানো হয়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ৬৩ জন জনবলের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কমিটি ৩১ জন জনবলের সুপারিশ করেছে।