জেলায় জেলায় সমাবেশের ঘোষণা গণতন্ত্র মঞ্চের

অক্টোবর ও নভেম্বর দুই মাসব্যাপী জেলায় জেলায় সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সাত দলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চ। ৮ অক্টোবর থেকে ঢাকার বিভিন্ন থানায় সমাবেশ করবে। আর চলতি মাসেই ৮ বিভাগে হবে জোটের প্রতিনিধি সভা। এছাড়াও দ্রুততম সময়ে অন্যান্য গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে বৃহত্তর যুগপৎ আন্দোলনের উদ্যোগ নেবে জোটের নেতারা।

শুক্রবার বিকালে রাজধানীর শাহবাগে এক সমাবেশে জোটের পক্ষে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। ‘সরকার ও শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার’ এবং ‘রাজনৈতিক সভা সমাবেশে বাধা, হামলা-মামলা, দমন-পীড়ন, গুলি-হত্যা বন্ধের’ দাবিতে এই সমাবেশের আয়োজন করে গণতন্ত্র মঞ্চ।

সমাবেশে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য দেশকে বিক্রি করতে চাচ্ছে। এই গণতন্ত্র মঞ্চ হলো জনগণের সমস্ত অধিকার আদায়ের মঞ্চ। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হবে।

আ স ম আব্দুর রব বলেন, আজকে দেশের পরিস্থিতি ভয়াবহ। সরকারের কেউ কেউ বলছে লাঠি নিয়ে আসা যাবে না। লাঠিটা আনলো কে। আপনারা হেলমেট, স্ট্যাম্প, কুড়াল এগুলো তো দেখেন না। আমাদের দেশের কিছু মেয়ে সাফ ফুটবল থেকে উপমহাদেশের সর্বোচ্চ সম্মান বয়ে এনেছে। আর ইডেনের মেয়েরা সেগুলোকে বর্জন করেছে।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চ এই সরকারের বিরুদ্ধে এই জন্যই আন্দোলন করছে যে জালিম আওয়ামী লীগকে সরিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চ সবাইকে নিয়ে আমরা ক্ষমতায় যেতে চাই। আমরা সেই ক্ষমতা ও লড়াইয়ের কথাই বলছি যার মধ্য দিয়ে এই জালিমকে ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদ করতে হবে।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার নির্যাতন, নিপীড়ন, হামলা-মামলার মাধ্যমে অন্যদের দমিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকে চায়। কিন্তু এগুলোর মাধ্যমে কোনো আন্দোলন বা রাজনৈতিক দলকে দমানো যায় না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ক্ষমতা দিয়ে নির্বাচন দিতে হবে বলেও সরকারকে হুঁশিয়ার করেন মান্না।

সাইফুল হক বলেন, সরকার ইতিমধ্যে দেশের জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। এমনকি রাজনৈতিক ঐতিহ্যকে ভুলে গিয়ে আওয়ামী লীগ একটা সন্ত্রাসী দলে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ শেখ হাসিনাকে বিদায় না দিয়ে ঘরে ফিরবে না। রাজপথে আরেকটা গণজাগরণের মধ্যে দিয়ে এই সরকারকে বিদায় করা হবে। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে একটা গণতান্ত্রিক, মানবিক,  জবাবদিহিতার রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হবে।

নূরুল হক বলেন, বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সরকার পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগকে দিয়ে পরিকল্পিতভাবে হামলা করিয়ে সরকার নিজেদের চরিত্র সবার সামনে তুলে ধরছে। হামলা মামলা দিয়ে জনগণের আন্দোলনকে দমিয়ে রাখা যাবে না। আমরা এই স্বৈরাচারী সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত মাঠে থাকব। সভাপতির বক্তব্যে জোনায়েদ সাকি বলেন, মানুষ রাজপথে নেমে গেছে। সরকারের পায়ের তলায় মাটি নাই, কাজেই হামলা ছাড়া আর কোনো অস্ত্রও তাদের কাছে নেই।

কিন্তু  ইতিহাস সাক্ষী মিছিলে গুলি করে কেউ ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে নি। এই সরকারও পারবে না। এই সমাবেশের স্পষ্ট ঘোষণা এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়। সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে এবং অন্তবর্তীকালীন সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। এবারের লড়াই মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই। সে কারণেই এবারের লড়াই গণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াই।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির সভাপতিত্বে ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান রিজুর পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক,

গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নূরুল হক নূর, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ছানোয়ার হোসেন তালুকদার, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার,

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য বহ্নি শিখা জামালী, গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, গণঅধিকার পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক রাশেদ খান, ভাসানী অনুসারী পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক আখতার হোসেন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় প্রচার সমন্বয়ক হাসিব উদ্দীন হোসেন প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *