চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি : চাঁপাইনবাবগঞ্জে ভয়াবহ আর্সেনিক ও আয়রনের পর এবার মিঠা পানির বদলে উঠছে লবণাক্ত ও উষ্ণ পানি। দিনদিন ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন বৃদ্ধি পাওয়ায় আশঙ্কাজনকহারে নেমে যাচ্ছে পানির স্তরও। তাই দেখা দিয়েছে তীব্র পানির সংকট। এক মহল্লা থেকে আরেক মহল্লায় বিশুদ্ধ পানির জন্য ছুটছেন সাধারণ মানুষ। স্বাস্থ্যঝুঁকি ও ভোগান্তি এড়াতে অনেকেই আবার কিনে খাচ্ছেন বিশুদ্ধ পানি। এই পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক বলছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার জোড়বাগান, রেহাইচর, চাঁদলাই, শিবতলা, রাজারামপুর, নামোশংকরবাটিসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিঠা পানির অঞ্চলে বেশ কিছুদিন ধরেই উঠছে লবণাক্ত আর উষ্ণ পানি। এলাকার বাসিন্দাদের বাসা বাড়ি থেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সবারই ভোগান্তির কারণ এখন এই খাবার পানি। নামোশংকরবাটি এলাকার নুর বানু বলেন, পৌরসভা থেকে আমরা যে পানিটা পাচ্ছি। এ পানি অত্যন্ত লবণাক্ত আর উষ্ণ। খাওয়া যায় না। তাই আমাদের অন্য এলাকা থেকে পানি এনে খেতে হয়। প্রায় এক বছর থেকে আমাদের পানি নিয়ে এই ভোগান্তি সইতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, সব ভোগান্তি মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু পানির সমস্যা যে কতটা কষ্টের তা না দেখলে বুঝবেন না। শিবতলা এলাকার ইয়াসমিন নামে এক নারী বলেন, নিজে টিউবওয়েল বসালেও আর্সেনিক ও আয়রনযুক্ত লালচে পানি ওঠে। আর পৌরসভার লাইনে যে পানি আমাদের দেওয়া হয় সে পানি লবণাক্ত ও উষ্ণ। কোনোটাই ব্যবহারের যোগ্য না। তাই অনেক দূর থেকে আমাদের পানি আনতে হয়।
রেহাইচর গ্রামের শিউলি বেগম বলেন, নলকূপের পানিতে আয়রন ও আর্সেনিক আছে। আর পৌরসভার পানি গরম, লবণাক্ত ও দুর্গন্ধ হয়। এই পানি খেয়ে আমরা অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি। সাদা কাপড় পরিষ্কার করলে লাল হয়ে যায়। এই কাপড় আর ব্যবহার করা যায় না। নলকূপের পানিতে আয়রন আর আর্সেনিক যুক্ত পানি খেলে আমাদের হাত ফুলে ফুলে যায়। এই ভোগান্তি থেকে আমরা মুক্তি চাই।
জেলা শহরের এক চা বিক্রেতা বলেন, চায়ের দোকানে অনেক পানির দরকার হয়। কিন্তু বিশুদ্ধ পানির বড় সংকট। যথেষ্ট পানি না থাকায় ক্রেতাদের পানি কিনে খাওয়াতে হয়। এতে আমার ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে। চায়ের দোকান কী পানি কিনে চালানো সম্ভব? চাঁপাইনবাবগঞ্জ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী অতিম কুমার সরকার বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলে গভীর নলকূপের ব্যবহার আর চরাঞ্চলে পদ্মা, মহানন্দা, পূর্ণভবা নদীর পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায়, পরিবেশগত এই বিপর্যয় তৈরি হয়েছে।
এখন অনেক গভীরে নলকূপ বসানোর পরও পানি উষ্ণ এবং লবণাক্ত উঠছে। আর ওপরের স্তরে আর্সেনিক ও আয়রনের সমস্যা; যা জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী ইমরান হোসেন বলেন, পানির স্তর দিনদিন নিচে নেমে যাচ্ছে। এটা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। আর এখানে যে লবণাক্ত পানি, এটাও আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। আগামীতে আমরা কীভাবে জনসাধারণকে পানি সরবরাহ করব তা নিয়েও উদ্বেগে রয়েছি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মোখলেসুর রহমান বলেন, এখানে পানির স্তর দিনদিন নিচে নেমে যাচ্ছে। তাই আমরা এই বিষয়টি সিভিল সার্জন ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে জানিয়েছি। তারা বিভিন্ন পরীক্ষা করছে। আর পৌরবাসীকে পানির সমস্যা থেকে বাঁচাতে আমরা কাজ করছি। চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. এস এম মাহমুদুর রশিদ বলেন, এরইমধ্যে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর পানির নমুনা সংগ্রহ করেছে।
এই নমুনায় সোডিয়াম ক্লোরাইড যে লবণ তা উচ্চমাত্রায় পাওয়া গেছে। এছাড়া এখানে আয়রনের মাত্রাও সাধারণের চেয়ে বেশি। এই পানি ব্যবহার করলে অনেক ধরনের রোগ হতে পারে। পৌরসভাবাসীকে এই পানি ব্যাবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, পৌরসভায় প্রতিদিন বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজন ২ কোটি ৭৭ লাখ ৪১ হাজার লিটার। চাহিদার বিপরীতে একটি সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ও ২৫টি ডিপ টিউবওয়েলের মাধ্যমে এক কোটি ৯৩ লাখ ৪১ হাজার লিটার সরবরাহ করা হচ্ছে।