রমজানের দশ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো জমে ওঠেনি ঈদের বাজার। অনেকটা ধীরগতিতে চলছে বেচাকেনা। ঈদুল ফিতর সামনে রেখে রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট ও শপিংমলে ক্রেতাদের চিরচেনা ভিড় নেই। বছরের অন্যান্য সময়ের মতোই ক্রেতা উপস্থিতি ও কেনাবেচা অনেকটা ঢিলেঢালা। একই অবস্থা ফুটপাতের দোকানগুলোতেও। তবে ব্যবসায়ীদের আশা, ১৫ রমজানের পর থেকে জমজমাট হয়ে উঠবে ঈদের বাজার। কেনাবেচায়ও গতি ফিরবে।
সোমবার (৩ এপ্রিল) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর মৌচাক মার্কেট, ফরচুন শপিং মল, আনারকলি, আয়েশা শপিং কমপ্লেক্স, লিলি প্লাজাসহ আশপাশের ফুটপাত ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। এদিন কথা হয় আয়েশা শপিং কমপ্লেক্সের ইতদা পাঞ্জাবির সেলস এক্সিকিউটিভ সোহরাব হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, এবার ঈদের বেচাকেনা অন্যান্য বছরের তুলনায় অর্ধেকও বলা যাবে না। এখন পর্যন্ত ক্রেতাদের ভিড় নেই। বছরের স্বাভাবিক সময়ের মতোই চলছে সবকিছু। অথচ গত বছরও ঈদুল ফিতরের শুরু থেকে ভালো বেচাকেনা ছিল।
একই কথা বলেন মৌচাক মার্কেটের পোশাক বিক্রেতা মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি বলেন, ঈদের বেচাকেনা বলতে গত শুক্রবার কিছুটা ভিড় ছিল। এছাড়া রমজানের গত দশ দিনে ক্রেতাদের তেমন ভিড় নেই। ঈদকেন্দ্রিক বেচাকেনাও ভালো যাচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত কেমন বেচাবিক্রি হয় তা বলা যাচ্ছে না। আমরা আরও কিছু দিন অপেক্ষা করবো। আশা করি, ১৫ রমজানের পর বেচাবিক্রি পুরোদমে শুরু হবে।
পোশাকের দোকানে ভিড় না থাকলেও এদিন ব্যাগ, জুয়েলারি, কসমেটিকস ও জুতোর দোকানগুলোতে ছিল ভিন্ন চিত্র। এসব দোকানে ক্রেতার ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। জুতা বিক্রেতা কামরুল ইসলাম জানান, এবারের ঈদে নতুন নতুন জুতো-হিল এসেছে। দেখতে সুন্দর আর দামে তুলনামূলক কম হওয়ায় বিক্রি বেশ ভালো। রমজানের শুরু থেকে ক্রেতাদের ভালো সাড়া পাচ্ছি।
জুয়েলারি আইটেম বিক্রেতা হাসান বলেন, প্রতিবছরই ক্রেতারা আগেভাগেই জুয়েলারি বা কসমেটিকস কিনে থাকেন। যদিও পছন্দ করতে দু-একদিন সময় নেন অনেকে। জুয়েলারি দোকানে সোহাগী নামের এক ক্রেতার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, ঈদের আগে অনেক ভিড় হয়। এ কারণে জুয়েলারি আইটেম আগেই কিনতে এসেছেন। কেনাকাটা শেষ করে বিকেলের মধ্যেই বাসায় ফিরবেন।
তবে মৌচাক মার্কেটের সামনে ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের অনেকটা অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে। সেখানকার দোকানগুলোতে ক্রেতা উপস্থিতি একেবারেই চোখে পড়েনি। ফুটপাতের ব্যবসায়ী আব্দুল জলিল জাগো নিউজকে বলেন, গত ঈদে রমজানের শুরু থেকে ভালো বেচাকেনা ছিল। এবার ১০ দিনে তিন হাজার টাকাও বিক্রি হয়নি। সামনের দিনগুলোতে কেমন বেচাবিক্রি হয় বুঝতে পারছি না। হাতের পুঁজি ভেঙে দোকানে মাল তুলেছি। ব্যবসা না হলে লোকসানে পড়তে হবে। আশায় আছি, ১৫ রোজার পর ভালো ব্যবসা হবে। তখন হয়তো দুই পয়সা লাভ হবে।
মৌচাক-মালিবাগ এলাকার বিভিন্ন মার্কেটে এবার নানা ধরনের শাড়ির পসরা চোখে পড়েছে। এসব শাড়ির দাম ৭৫০ থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকার মধ্যে। থ্রি পিস বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত। এছাড়া ওয়ান পিস ৩০০ থেকে এক হাজার ৭০০ টাকা, টু পিস ৮৫০ থেকে এক হাজার ৯০০ টাকা, প্লাজো ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা, মেয়েদের প্যান্ট ৪৫০ থেকে ৭৫০ টাকা, পাঞ্জাবি ৩০০ থেকে তিন হাজার টাকা, শার্ট ৪৫০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা এবং টি শার্ট বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকার মধ্যে।
এছাড়া এসব মার্কেটে অনেক দোকানে শিশুদের জন্য বিভিন্ন আইটেমের পোশাক বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৬৫০ টাকায়। মেয়েদের জুতা (স্লিপার) বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা, হিল বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে। বিভিন্ন ব্যাগ পাওয়া যাচ্ছে ৩৫০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকায়। এছাড়া জুয়েলারি আইটেম যেমন চুড়ি, ব্রেসলেট, রিং, এয়ার রিংসহ নানা পণ্য ৩০ থেকে এক হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হতে দেখা গেছে।