ইরাকের সর্বোচ্চ নেতা হতে চাওয়া কে এই মোকতাদা আল-সদর?

ইরাকের সবচেয়ে প্রভাবশালী শিয়া নেতা গ্র্যান্ড আয়াতুল্লাহ আলী সিস্তানি। কিন্তু ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনের পর গত দুই দশকে মোকতাদা আল-সদর দেশটির বিকল্প নেতা হয়ে উঠেছেন। সর্বশেষ সাধারণ নির্বাচনে তার দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও সর্বোচ্চ আসন পেয়েছে। শেষ পর্যন্ত সরকার গঠন করতে ব্যর্থ হলেও দেশটির ক্ষমতার কেন্দ্র এই শিয়া নেতাকে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে। খবর রয়টার্স ও আল-জাজিরার।

শিয়াদের পবিত্র শহর হিসেবে পরিচিত ইরাকের নাজাফে জন্মগ্রহণ করেন মোকতাদা আল-সদর। তখন দেশটিতে বাথ পার্টির শাসন চলছিল। প্রেসিডেন্ট ছিলেন আহমেদ হাসান আল-বকর আর ভাইস প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন। সদরের বাবা মোহাম্মদ সাদিক আল-সদর ও শ্বশুর মোহাম্মদ বাকির আল-সদর ছিলেন প্রভাবশালী শিয়া নেতা।

ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের সমালোচনা করায় ১৯৯৯ সালে সাদিক আল-সদরকে হত্যা করা হয়। এর আগে ১৯৮০ সালে বাকিরও সাদ্দামের হাতে নিহত হন। তাদের শহিদ ও গরিবের দরদি মনে করেন বহু শিয়া। বাগদাদের সদর সিটি মোকতাদা আল-সদরের বাবার নামে করা হয়। একসময় শহরটির নাম সাদ্দাম সিটি ছিল। এ শহরই মোকতাদা আল-সদরের শক্তির কেন্দ্রস্থল। এখান থেকেই তিনি ইরাকজুড়ে শিয়াদের নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন।

সাদ্দামকে উৎখাতে ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক অভিযান শুরু করলে শিয়াদের একটি অংশ মার্কিন বাহিনীকে সহযোগিতা করে। তবে শিয়া হয়েও সে পথে যাননি মোকতাদা আল-সদর। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতা শুরু করেন। ২০০৪ সাল থেকে তার মিলিশিয়া বাহিনী মাহদি আর্মি মার্কিন সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে। রাস্তার পাশে পুঁতে রাখা বহু বোমা হামলার জন্য তার বাহিনীকে দায়ী করা হয়।

মার্কিন আগ্রাসনের আগে তেমন পরিচিত ছিলেন না মোকতাদা আল-সদর। কিন্তু মার্কিন বাহিনীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তিনি আলোচনায় চলে আসেন। তিনি দখলদারবিরোধী প্রতিরোধ লড়াইয়ের প্রতীকে পরিণত হন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি ইরাকের রাজনীতিতে চালকের আসনে চলে আসেন।

সদরের মাহদি আর্মিকে সবচেয়ে বড় হুমকি মনে করে যুক্তরাষ্ট্র। এদিকে আগ্রাসনের সময় মধ্যপন্থী শিয়া নেতা আবদুল মজিদ আল-খোয়েইকে নাজাফে আনেন আমেরিকানরা। উদ্দেশ্য ছিল তার মাধ্যমে শিয়াদের সমর্থন আদায়। তিনি ২০০৩ সালে খুন হন। এ হত্যার নেপথ্যে সদরের হাত ছিল বলে সন্দেহ করে যুক্তরাষ্ট্র; যদিও তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন।

২০০৪ সালে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে দখলদার মার্কিন বাহিনী জানায়, তারা সদরকে জীবিত অথবা মৃত আটক করবে।
শুধু যুক্তরাষ্ট্রেরই বিরোধিতা নয়, শিয়া হয়েও ইরানবিরোধী রাজনীতি করছেন মোকতাদা আল-সদর। জাতীয়তাবাদী রাজনীতি করা সদর নির্যাতন-নিপীড়নের মুখেও কখনো ইরাক ছেড়ে যাননি। যদিও তার সহকর্মী অনেক রাজনীতিকই ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনের পর ইরান ও আমেরিকার নির্বাসিত জীবনযাপন ছেড়ে দেশে ফেরেন।

যুক্তরাষ্ট্র ইরাক থেকে পাততাড়ি গোটানোর পর ইরানসমর্থিত শিয়া গোষ্ঠীগুলোই এখন সদরের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী। ইরানের প্রতি ইরাকি জনগণের অসন্তোষের বিষয়টি সামনে আনেন মোকতাদা আল-সদর। এই শিয়া নেতা বলেন, তিনি কখনো ইরাককে তেহরানের কবজায় যেতে দেবেন না। গত বছরের নির্বাচনে মোকতাদা আল-সদরের দল ৩২৯ আসনের পার্লামেন্টে সর্বাধিক ৭৩টি আসন পায়। আগের নির্বাচনে আসনসংখ্যা ছিল ৫৪।

নির্বাচনের প্রায় ১০ মাস হতে চললেও ইরাক কোনো সরকার পায়নি। মার্কিন আগ্রাসনের পর এই প্রথম দীর্ঘ সময় ধরে দেশটিতে কোনো সরকার নেই। গত ২৯ আগস্ট মোকতাদা আল-সদর বলেন, নিয়ন্ত্রণহীন রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে তিনি রাজনীতি ছেড়ে দিচ্ছেন এবং তার সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিচ্ছেন। সদর আগেও বেশ কয়েকবার রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন, যদিও বরাবরই তিনি রাজনীতিতে সক্রিয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *