অস্বাভাবিক বৃদ্ধির পর রাজধানীর বাজারগুলোতে ডিমের দাম গত সপ্তাহেই কমতে শুরু করে। সপ্তাহের ব্যবধানে ডজনে ডিমের দাম কমেছে আরও ৫ টাকা। এর মাধ্যমে দুই সপ্তাহে ডিমের দাম ডজনে ৩৫ টাকা কমলো। ডিমের দাম কিছুটা কমলেও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি। ফলে সবজি কিনে স্বস্তি পাচ্ছেন না ক্রেতারা। সেই সঙ্গে মুরগি এবং মাছের দামেও অস্বস্তি দেখা গেছে। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ ব্যবসায়ী ডিমের ডজন ১২৫ টাকা বিক্রি করছেন। এক সপ্তাহ আগে এসব ব্যবসায়ীরা ডিমের ডজন ১৩০ টাকা বিক্রি করেন।
আর জ্বালানি তেল কেরোসিন, ডিজেল, পেট্রল ও অকটেনের দাম বাড়ানোর পর দফায় দফায় বেড়ে দুই সপ্তাহ আগে ডিমের ডজন ওঠে ১৬০ টাকায়। দেশের ইতিহাসে এর আগে কখনো এতো বেশি দামে ডিম বিক্রি হয়নি। এমন অস্বাভাবিক দাম বাড়ার পর এখন ডিমের দাম কমার বিষয়ে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী লতিফ বলেন, ডিমের দাম যে সিন্ডিকেট করে বাড়ানো হয়েছিল এটা সবাই বুঝতে পারছে। অস্বাভাবিক দাম বাড়ার কারণে অনেকে ডিম কেনা বন্ধ করে দেন। ফলে ডিমের বিক্রি ব্যাপক কমে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে দাম কিছুটা কমেছে। আমাদের ধারণা সামনে ডিমের দাম আরও কমবে।
ডিমের সঙ্গে অস্বাভাবিক দাম বাড়ে ব্রয়লার মুরগির। এরপর গত সপ্তাহে ব্রয়ালর মুরগির দাম কিছুটা কমলেও এ সপ্তাহে দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বেশিরভাগ ব্যবসায়ী ব্রয়ালর মুরগি কেজি বিক্রি করছেন ১৮০ টাকা কেজি। দুই সপ্তাহ আগে ব্রয়লার মুরগির কেজি ২০০ টাকায় উঠেছিল। ব্রয়লার মুরগির পাশাপাশি অপরিবর্তিত রয়েছে পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগির দাম। সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা। দুই সপ্তাহ আগে ছিল ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা।
মুরগির দামের বিষয়ে খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী মো. হাছান বলেন, দাম বাড়ার কারণে দুই-তিন সপ্তাহ ধরে মুরগির বিক্রি কম হচ্ছে। তবে বাজারে মুরগির সরবরাহও কম রয়েছে। যে কারণে দাম কমছে না। আমাদের ধারণা কয়েকদিনের মধ্যে বাজারে মুরগির সরবরাহ বাড়বে, তখন দাম কমতে পারে। এদিকে বাজারে নতুন সবজি হিসেবে শিম ও ফুলকপি আসলেও তা ক্রেতাদের স্বস্তি দিচ্ছে না। চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে এই দুই সবজি। পাশাপাশি অন্যান্য সবজির দামও বেশ চড়া। ফলে সবজি কিনতে এসে অস্বস্তিতে পড়েছেন ক্রেতারা।
আগের মতো বাজারে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে শিম। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে এই সবজিটির দাম কিছুটা কমেছে। এক পোয়া (২৫০ গ্রাম) শিম বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। তবে কেউ এক কেজি নিলে ১৫০ টাকা রাখা হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে শিমের পোয়া ৫০ টাকা এবং কেজি ১৯০ টাকা ছিল। আর নতুন আসা ছোট ফুলকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা। শিমের দাম কমলেও অপরিবর্তিত রয়েছে পাকা টমেটো, গাজর এবং বরবটির দাম। এক কেজি পাকা টমেটো বিক্রি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৩০ টাকায়। গাজর বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি। বরবটির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা।
দামি এই সবজিগুলোর পাশাপাশি দাম অপরিবর্তিত রয়েছে অন্যান্য সবজির। বেগুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা, কাঁকরোলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা, কাঁচা পেঁপের কেজি ২০ থেকে ২৫ টাকা, পটল ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। কচুর লতি, ঝিঙা, চিচিঙ্গার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। করলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা।
সবজির দাম নিয়ে অস্বস্তি প্রকাশ করেন কারওয়ান বাজারের ক্রেতা হুমায়ূন আহমেদ। তিনি বলেন, ৫০০ টাকা নিয়ে বাজারে আসলে তেমন কিছুই কেনা যায় না। ছোট ছোট ফুলকপি, ৩০ টাকা পিস। এই ফুলকপি এক বেলার জন্যই লাগবে ৩টা। আর একশ টাকার শিম কিনলে ব্যাগের নিচেই পড়ে থাকে। চারজনের সংসারে এক হাজার টাকার সবজি কিনলে এক সপ্তাহ যায় না।
তিনি বলেন, বাজারে সবকিছুর দাম বাড়তি। জিনিসপত্রের যে দাম, তাতে কেউ স্বস্তিতে নেই। কিন্তু কেউ কিছু বলছে না। সবাই মুখ বুজে চুপচাপ সব সহ্য করে নিচ্ছে। সবার খরচ বেড়ে গেছে। কিন্তু আয় বাড়েনি। খিলগাঁও বাজারে সবজি কিনতে আসা মিজানুর রহমানও সবজির দাম নিয়ে অসন্তুষ্ট। তিনি বলেন, সব ধরনের সবজির দাম বেশি। বাজারে আসা নতুন সবজিতে হাত দেওয়ার অবস্থা নেই। একশ টাকার সবজি কিনলে একদিন হয় না। সবকিছুর অস্বাভাবিক দামে আমরা বেশ কষ্টে আছি। এখন আমাদের জন্য টিকে থাকা বড় কঠিন হয়ে পড়েছে।
সবজির দামের বিষয়ে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী শামছুল আলম বলেন, বাজারে নতুন সবজি আসতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে শিম, ফুলকপি চলে এসেছে। এখন দিন যত যাবে এসব সবজির সরবরাহ বাড়বে। তাই আমাদের ধারণা সামনে সবজির দাম কমবে। সপ্তাহের ব্যবধানে দাম অপরিবর্তিত রয়েছে পেঁয়াজ ও আলুর। পেঁয়াজ গত সপ্তাহের মতো ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা। তবে কাঁচা মরিচের দাম কমেছে। গত সপ্তাহে ৩০ থেকে ৪০ টাকা পোয়া বিক্রি হওয়া কাঁচা মরিচ এখন ২৫ থেকে ৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৪৫০ টাকা। তেলাপিয়া, পাঙাস মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ২০০ টাকা। শিং মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪৬০ টাকা। কৈ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। পাবদা মাছের কেজি ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে এসব মাছের দামে পরিবর্তন আসেনি।
দাম অপরিবর্তিত থাকলেও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে চিংড়ি ও ইলিশ। চিংড়ির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। আর এক কেজি ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০০ থেকে ১৮০০ টাকা। ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা। আর ৪০০-৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা।
রামপুরা বাজারে মাছ কিনতে আসা ফিরোজ বলেন, মাংসের যে দাম তাতে খাওয়ার উপায় নেই। মাছের দামেও একই অবস্থা। তেলাপিয়া, পাঙাসের কেজিও দুইশ টাকা বিক্রি হচ্ছে। জিনিসপত্রের দাম এখন আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষ খুব কষ্টে আছে।