আবারও শ্বাসরূদ্ধকর একটি ম্যাচ, আবারও স্নায়ুক্ষয়ী মুহূর্ত। ঠিক যেন ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচের মতোই। একেবারে শেষ ওভারের শেষ বলে এসে আবারও হেরে গেলো পাকিস্তান। চিত্রনাট্য একইরকম হলেও, এবার পাকিস্তান হারলো জিম্বাবুয়ের কাছে। শেষ বলে এসে হারলো মাত্র ১ রানের ব্যবধানে। প্রথমে ব্যাট করে ১৩০ রান করেছিল জিম্বাবুয়ে। জবাব দিতে নেমে ৮ উইকেট হারিয়ে ১২৯ রানে থামতে বাধ্য হয়েছে পাকিস্তান।
১৩১ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামার পর শুরু থেকেই পাকিস্তানকে চেপে ধরে জিম্বাবুয়ে বোলাররা। এক পর্যায়ে শেষ ওভারে জয়ের জন্য পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল ১১ রান। উইকেটে তখন সেট ব্যাটার মোহাম্মদ নওয়াজ এবং মোহাম্মদ ওয়াসিম। জিম্বাবুয়ের বোলার ব্রাড ইভান্স। প্রথম দুই বলেই ৭ রান নিয়ে নেন তারা নওয়াজ এবং ওয়াসিম।
৪ বলে প্রয়োজন মাত্র ৪ রান। তৃতীয় বলেও নিলো ১ রান। ৩ বলে ৩ রান। মোহাম্মদ নওয়াজ উইকেটে থাকার পরও চতুর্থ বলটি হলো ডট। রান নিতে পারলো না তারা। ২ বলে প্রয়োজন ৩ রান। পঞ্চম বলটিতেই তৈরি হলো চরম নাটকীয়তা। বাউন্ডারির লক্ষ্যে শট খেললেন। কিন্তু বলটা মিড অফের ওপর দিয়ে খেলতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন নওয়াজ। মাথার ওপর হাত বাড়িয়ে সেটা তালুবন্দী করলেন আরভিন। আউট হয়ে গেলেন তিনি ১৮ বলে ২২ রান করে।
সুতরাং, শেষ বলে প্রয়োজন হলো ৩ রান। স্ট্রাইকে শাহিন শাহ আফ্রিদি। বড় শট খেলতে পারেন তিনিও। কিন্তু ইভান্সের হিসেবি বল বাউন্ডারি মারতে পারলেন না শাহিন। সোজা ব্যাটে লং অনে খেললেন। দৌড়ে ১ রান করার পর দ্বিতীয় রান নিতে গিয়েই রানআউট হয়ে গেলেন শাহিন। ১ রানে জয় পেলো জিম্বাবুয়ে।
ভারতের বিপক্ষেও প্রায় জয়ের সামনে দাঁড়িয়েছিল পাকিস্তান। কিন্তু শেষ তিন ওভারে ৪৮ রানও রক্ষা করতে পারেনি বাবর আজমরা। শাহিন শাহ আফ্রিদি, হারিস রউফ এবং মোহাম্মদ নওয়াজের কাছ থেকে এই রান নিয়ে নেয় বিরাট কোহলিরা। শেষ বলে ভারতকে জয় এনে দেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন এবং কোহলি।
এবারও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষের খলনায়ক মোহাম্মদ নওয়াজ। প্রথম ম্যাচে বল হাতে, দ্বিতীয় ম্যাচে ব্যাট হাতে ব্যর্থ হয়ে হারালেন দলকে। অথচ শেষ ওভারের কঠিন মুহূর্তে সেট ব্যাটার বলতে তিনিই ছিলেন উইকেটে। জিম্বাবুয়ে বোলারদের কাছ থেকে তবুও তিনি ১১ রান নিতে পারলেন না। উল্টো ক্যাচ তুলে দিয়ে দলকে মহা বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে আউট হয়ে যান। যার ফলে শেষ বলে ৩ রান নেয়া সম্ভব হয়নি।
১৩১ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামার পর শুরু থেকেই চাপে থাকে পাকিস্তান। পার্থ স্টেডিয়ামের উইকেটটা নিঃসন্দেহে স্লো পিচ। রান তোলা কষ্টকর। তাই বলে পাকিস্তান দলটির ব্যাটিং যাদের ওপর নির্ভরশীল, সেই বাবর আজম আর মোহাম্মদ রিজওয়ান প্রথম ম্যাচের মত এই ম্যাচেও ব্যর্থ।
বাবর আউট হয়ে গেলেন মাত্র ৪ রান করে। মোহাম্মদ রিজওয়ান আউট হয়ে গেলেন ১৪ রান করে। ইফতিখার আহমেদ করলেন কেবল ৫ রান। ৩৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা পাকিস্তানকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন শান মাসুদ আর শাদাব খান। ৮৮ রানের মাথায় বিাদয় নেন শাদাব। ১৪ বলে তিনি করেন ১৭ রান।
এরপর মাঠে নেমে রানের দেখাই পেলেন না হায়দার আলি। গোল্ডেন ডাক মারলেন তিনি সিকান্দার রাজার বলে এলবিডব্লিউ হয়ে। দলীয় ৯৪ রানের মাথায় শান মাসুদ আউট হয়ে গেলে পাকিস্তান শিবিরে মোটামুটি শঙ্কা ঝেঁকে বসে। শান মাসুদ ৩৮ বলে করেন ৪৪ রান। এরপর মোহাম্মদ নওয়াজ উইকেটে থাকলেও শেষের ভিলেন হওয়ার জন্যই সম্ভবত টিকে ছিলেন এবং শেষ বলের আগের বলে আউট হয়ে ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ করেন তিনি।
জিম্বাবুয়ের হয়ে সিকান্দার রাজাই ভোগালেন বেশি পাকিস্তানকে। শান মাসুদ, শাদাব খান এবং হায়দার আলির উইকেট নেন তিনি ৪ ওভারে মাত্র ২৫ রান দিয়ে। ম্যাচ সেরার পুরস্কারও ওঠে তার হাতে। তেন্দাই চাতারার পরিবর্তে খেলতে নেমে ব্রাড ইভান্স নেন ২ উইকেট। ১টি করে উইকেট নেন মুজারাবানি এবং লুক জংউই।
এই পরাজয়ের ফলে পাকিস্তানের সেমিতে খেলার সম্ভাবনা একেবারেই কমে গেলো। প্রথম ম্যাচে ভারতের কাছে হেরেছে ৪ উইকেটে। আজ হারলো ১ রানে। দুই ম্যাচ শেষে এখনও পয়েন্টের খাতা শূন্য তাদের।
নিউজিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ জয় করে আসার পর বাবর আজমদের এই পারফরম্যান্স সত্যিই হতাশাজনক। অন্যদিকে প্রথম ম্যাচ থেকে ১ পয়েন্ট নিয়ে আজ আরও ২ পয়েন্ট যোগ করলো জিম্বাবুয়ে। তবে, রানরেটের ব্যবধানে থারা পয়েন্ট টেবিলে থাকলো ৩ নম্বরে। চার নম্বরে বাংলাদেশ। দুই নম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ভারত রয়েছে টেবিলের শীর্ষে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
টস: জিম্বাবুয়ে, ব্যাটিং
জিম্বাবুয়ে: ১৩০/৮, ২০ ওভার (শন উইলিয়ামস ৩১, ব্রাড ইভান্স ১৯, ক্রেইগ আরভিন ১৯, মাধভিরে ১৭, রায়ান বার্ল ১০*, অতিরিক্ত ১৪; মোহাম্মদ ওয়াসিম ৪/২৪, শাদাব খান ৩/২৩, হারিস রউফ ১/১২)।
পাকিস্তান: ১২৯/৮, ২০ ওভার (শান মাসুদ ৪৪, মোহাম্মদ নওয়াজ ২২, রিজওয়ান ১৪, শাদাব খান ১৭, মোহাম্মদ ওয়াসিম ১২*, অতিরিক্ত ১০; সিকান্দার রাজা ৩/২৫, ব্রাড ইভান্স ২/২৫, জংউই ১/১০, মুজারাবানি ১/১৮)।
ফল: জিম্বাবুয়ে ১ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: সিকান্দার রাজা (জিম্বাবুয়ে)।