বিশ্বজুড়ে দুর্ভিক্ষের ইঙ্গিত দিল জাতিসংঘ। বৈশ্বিক এই সংস্থার সবচেয়ে প্রভাবশালী বিভাগ নিরাপত্তা পরিষদের শুক্রবারের বৈঠকে এই ইঙ্গিত দিয়েছেন খাদ্য নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান ডেভিড বিসলি। তিনি জানিয়েছেন, বিশ্বের ৮২টি দেশের অন্তত ৩৪ কোটি ৫০ লাখ মানুষ চুড়ান্ত খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে; এবং যদি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হয়, সেক্ষেত্রে শিগিরই এই সংখ্যার সঙ্গে আরও ৭০ কোটি মানুষ যুক্ত হবেন। নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে নিজ বক্তব্যে জাতিসংঘের খাদ্য নিরাপত্তা বিভাগের এই শীর্ষ নির্বাহী বলেন, করোনা মহামারীর শুরুর পর্যায়ে বিশ্বজুড়ে যতসংখ্যক মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিল, মহামারীর আড়াই বছরে এই সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।
এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্তত ৪৫টি দেশে দুর্ভিক্ষ পরিস্থতির সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে বিসলি বলেন, “মহামারির আগ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে ক্ষুধার যে ঢেউ ছিল, মহামারীর প্রভাবে তা সুনামিতে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে খাদ্যপণ্যের মূল্য যে হারে বাড়ছে, তা অব্যাহত থাকলে আগামী ২০২৩ সালে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে খাদ্য সংকট শুরু হবে। ফলে শিগগিরই বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ শুরু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।” নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিভাগের প্রধান মার্টিন গ্রিফিথও উপস্থিতি ছিলেন। তিনি জানান, ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া, দক্ষিণ সুদান, ইয়েমেন, সোমালিয়া, আফগানিস্তানসহ এশিয়া ও আফ্রিকার বেশ কিছু দরিদ্র দেশে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ইতোমধ্যেই মানবিক বিপর্যয় পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে।
“সোমালিয়ায় ইতোমধ্যে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়ে গেছে। অন্যান্য দেশে এখনও দুর্ভিক্ষ শুরু না হলেও অবস্থা খুবই সঙ্গীন। সেসব দেশে লাখ লাখ মানুষ একবেলাও ঠিকমতো খেতে পারছে না,” বলেন জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিভাগের প্রধান। সংকটে থাকা বিভিন্ন দেশের একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে গ্রিফিথ আরও বলেন, “ইয়েমেনে গুরুতর খাদ্যাভাবে ভুগছে অন্তত ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ এবং দেশটির অন্তত ৫ লাখ ৩৮ হাজার শিশু অপুষ্টির শিকার।
দক্ষিণ সুদানে বর্তমানে ৬০ শতাংশ মানুষের হাতে পুষ্টিকর খাদ্য কেনার মতো অর্থ নেই। ইথিওপিয়ায় এই সংখ্যা আরও বেশি— ১ কোটি ৩০ লাখ। নাইজেরিয়ায় দুই বেলা খাবারের নিশ্চয়তা নেই— এমন মানুষের সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ।” শুক্রবারের বৈঠকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের অবিলম্বে সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান ডেভিড বিসলি ও মার্টিন গ্রিফিথ। সূত্র: আলজাজিরা